সুন্দরবনের কোলঘেঁষা খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কয়রা নদী। নদীপারের গ্রামটির নাম হড্ডা। পাশেই সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন। কয়েক হাজার মানুষের বসবাস এ গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে হড্ডা গ্রামে দুটি বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, শীত মৌসুমে সুন্দরবন–সংলগ্ন নদীতে পানি কমে গেছে। পানি কমে যাওয়ার কারণে বনের বাঘ নদী পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে। বনকর্মীরা খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়ে দুটি বাঘের ছাপ দেখতে পেয়েছেন। পায়ের ছাপ দেখে মনে হয়েছে, আজ ভোরের দিকে বাঘ দুটি লোকালয়ে এসে আবার বনে ফিরে গেছে।
আজ ভোরের দিকে কয়রা নদী পার হয়ে বাঘ দুটি হড্ডা গ্রামে ঢুকেছিল বলে ধারণা করছে বন বিভাগ। সকালে হড্ডা গ্রামে সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর প্রথমে বড় একটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামের কয়েকজন। একটু দূরে অপেক্ষাকৃত ছোট আরও একটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান তাঁরা। এর পর থেকে বনসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন বিভাগ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য ও গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই এলাকায় তল্লাশি করেন। বাঘ লোকালয়ে এলেও পরে আবার সুন্দরবনে ফিরে গেছে বলে পায়ের ছাপ দেখে তাঁরা ধারণা করছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন–সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহোশীষ কুমার সরদার বলেন, বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ভাটার সময় নদীতে পানি একেবারেই কম। আজ ভোরের দিকে সুন্দরবন থেকে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কয়রা নদী পার হয়ে দুটি বাঘ হড্ডা গ্রামে ঢুকে পড়ে। বাঘ দুটি নদীর পাড়সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছে। সকালে গ্রামবাসী ওসব স্থানে বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেন। তবে নদীর পাড়ে বাঘের সর্বশেষ পায়ের ছাপ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, লোকালয়ে আসা দুটি বাঘ বনে ফিরে গেছে। তারপরও বাঘের ভয়ে গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত।
সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আজ সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি বাঘের পায়ের অসংখ্য তাজা ছাপ দেখতে পেয়েছেন। আশপাশে তল্লাশিও করা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বাঘ দুটি বিচরণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ দুটি সুন্দরবনে ফিরে গেছে। তবে আবার বাঘ যাতে লোকালয়ে ফিরে কোনো মানুষের ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বনরক্ষীদের লোকালয়–সংলগ্ন নদীতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
বন সুরক্ষায় নিয়োজিত সুন্দরবন সহব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, বাঘ আসার খবর শুনে মানুষ ভয়ে আছে। তবে বাঘ দুটি এলাকার মানুষ বা গবাদিপশুর কোনো ক্ষতি করেনি।