পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুরের সময় পুড়িয়ে দেওয়া বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষ
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুরের সময় পুড়িয়ে দেওয়া বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষ

পঞ্চগড়ে হামলার ঘটনায় বেড়েই চলেছে মামলার সংখ্যা, ২৭ মামলায় গ্রেপ্তার ২০০

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ঘিরে সংঘর্ষ, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ গত বুধবার দিবাগত রাতে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি বোদা থানায় একটি মামলা করেছেন।

এ নিয়ে পঞ্চগড় সদর ও বোদা থানায় মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭টিতে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ২০০।

এদিকে দিন দিন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হওয়ায় মামলার সংখ্যা বাড়ছে। তবে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে না।

মামলার সংখ্যা নয়, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় ব্যক্তিদের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনার পর এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অপরাধীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলা, সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪ মার্চ রাত থেকে ১৫ মার্চ রাত পর্যন্ত মোট ২৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় ২০টি এবং বোদা থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। ২৭টি মামলার মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে সাতটি, র‍্যাবের পক্ষ থেকে একটি ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে ১৯টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারনামীয় আসামির সংখ্যা ২৯৩ জন আর অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে করা মামলাগুলোর মধ্যে বাড়িঘর ছাড়াও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও জেলা শহরের কয়েকটি দোকানের মালিকও বাদী হয়েছেন।

পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী এরশাদ হোসেন সরকার বলেন, আহমদিয়াদের ওপর হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনায় মামলার সংখ্যা বড় কথা নয়, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। তবে সেটিও খুবই সচেতনতার সঙ্গে দেখতে হবে, যাতে কোনো নিরপরাধ বা নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।

পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন পৃথকভাবে মামলা করায় মামলার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ তাঁদের ক্লাস্টার হিসেবে কয়েকজন মিলে মামলা দেওয়ার কথা বলেছে। যেহেতু অপরাধ একই রকম। ঘটনার পর থেকেই তাঁরা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছেন। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হবে না।

পঞ্চগড় শহরের পাশে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের জলসা বন্ধের দাবিতে ৩ মার্চ জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। এতে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক দল বিক্ষোভকারী আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় দুই তরুণ নিহত হন। পুলিশ, সাংবাদিকসহ আহত হন শতাধিক মানুষ।