মোতাসিম বিল্লাহ, শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া ও মাহামুদুল গনির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
প্রার্থীদের বা তাঁদের পরিবারের দলীয় অবস্থান শক্ত।
মাগুরার শ্রীপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের ভোট যে প্রার্থী বেশি টানতে পারবেন, ফলাফল তাঁর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম মোতাসিম বিল্লাহ ওরফে সংগ্রাম (ঘোড়া), শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া (মোটরসাইকেল), বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহামুদুল গনি (দোয়াত কলম) ও খন্দকার আসরার এলাহী (আনারস)। তবে আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে তেমন একটা প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না।
নেতা–কর্মীরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের ভোট যে প্রার্থী বেশি টানতে পারবেন, তাঁর পাল্লা ভারী হবে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মোতাসিম বিল্লাহ, শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া ও মাহামুদুল গনির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। গত শুক্র ও গতকাল শনিবার তাঁরা প্রচারণা চালিয়েছেন।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ উপজেলায় দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মিয়া মাহমুদুল গনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সদস্য গত নির্বাচনে স্থানীয় আট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন পেয়েছিলেন। তবে এবার সবার সমর্থন পাননি তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ নেতাদের একটি অংশ তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে থাকা শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া ও মোতাসিম বিল্লাহর বাড়ি একই ইউনিয়নে। দুটি পরিবারেরই উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত ভিত্তি রয়েছে। শ্রীকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতা রয়েছে। ১ মে রাতে নবগ্রাম বাজারে এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে দুই পক্ষ।
মোতাসিম বিল্লাহর পক্ষে মাঠে নেমেছেন তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁরা হলেন শ্রীপুর সদর ইউনিয়নের মসিয়ার রহমান, গয়েশপুরের আবদুল হালিম মোল্যা ও সব্দালপুর ইউনিয়নের পান্না খাতুন। এর পাশাপাশি নাকোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ ঘোড়া প্রতীকের এই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।
অন্যদিকে শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া রাজনীতিতে নতুন। দলেও কোনো পদ-পদবি নেই। তবে তাঁর বড় ভাই উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও শ্রীকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তিনি। গত পাঁচ বছরে সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কুতুবুল্লাহ হোসেন মিয়ার পুরো উপজেলার রাজনীতিতে একটি শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তাঁদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পঙ্কজ সাহা, সদস্য ইসমত আরা, দারিয়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনসহ অন্যরা।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮ মে একই সঙ্গে শ্রীপুর ও সদর উপজেলায় নির্বাচন হলেও দুই জায়গায় ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা গেছে। সদর উপজেলায় যেখানে দুই প্রার্থীর পক্ষে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে, সেখানে শ্রীপুরে জেলার নেতাদের প্রকাশ্য কোনো হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। শ্রীপুরে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার ফলাফল বুমেরাং হতে পারে, এমন আশঙ্কায় জেলার নেতারা এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে যে প্রার্থী বিএনপি ও জামায়াতের ভোট বেশি নিতে পারবেন, তাঁর জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। প্রার্থীরা গোপনে গোপনে সে চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মুন্সী রেজাউল করীম মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের একার নির্বাচন। সব প্রার্থী এক দলের। এখানে আমাদের কোনো নেতা-কর্মী ভোট দিতে যাবেন না। ২ মে বিশেষ সভা ডেকে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা যাঁর যাঁকে ভালো লাগছে, তিনি তাঁর হয়ে কাজ করছেন।