সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে কাদা। সম্প্রতি পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের বাঁশকল এলাকায়
সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে কাদা। সম্প্রতি পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের বাঁশকল এলাকায়

পাটগ্রাম-বুড়িমারী সড়ক

বেহাল সড়কে চরম ভোগান্তি

সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা জমে আছে। প্রথম দেখায় মনেই হয় না এটি সড়ক। এসব স্থানে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কটির বেহাল হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চার ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।

এই অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের। পাটগ্রাম পৌরসভার শেষ সীমানা থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার (বাঁশকল) পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা বুড়িমারী ইউনিয়নের মেডিকেল মোড় থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের সংযোগস্থল বাঁশকল এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কের এই অংশে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচল করে। বিভিন্ন এলাকায় পাথর খালাস করে আবার চলে যায়। এতে সড়কটি আরও বেহাল হয়েছে। বর্ষাকালে খানাখন্দ ও কাদায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিডি) পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রাম সদর-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাটগ্রাম সদর থেকে পৌরসভার শেষ সীমানা ধবলসূতী গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায়। বাকি ১০ কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের আওতায় পড়েছে।

সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরের দিকে এলজিইডি ওই সড়কের বুড়িমারী ইউনিয়নের মেডিকেল মোড় থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার (বাঁশকল) পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করে। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

পাটগ্রাম এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা সড়কের নকশায় সড়কটি প্রস্থে প্রথমে ১২ ফুট ও পরে ১৮ ফুটে উন্নীত করা হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ভারতীয় ১০ চাকার ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০ টন পাথর খালাসের জন্য এই সড়কে আনা হয়। এতে খানাখন্দসহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের এসব ট্রাক আঞ্চলিক সড়কে চলাচল বন্ধ করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বৈঠকে একাধিকার আলোচনা হলেও কাজ হয়নি।

গতকাল বুধবার বুড়িমারী মেডিকেল মোড় এলাকা থেকে বাঁশকল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে দেখা যায়, সড়কের কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের কাঁচা মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে ঢালের মাঝবরাবর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে একটি গাড়ি আরেকটিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারছে না। বিভিন্ন ভারী যানবাহন, অটোরিকশা, ভ্যান, রিকশা চলছে সড়কে। তবে গর্তের কারণে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। আবার দুর্ঘটনাও ঘটছে।

পাটগ্রাম ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, এই সড়ক বেহাল অনেক দিন ধরেই। সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উফারমারা গ্রামের তফিয়ার রহমান, ফরিদুল ইসলামসহ ১০ জন কৃষক বলেন, তাঁদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজারে ও উপজেলা সদরের হাটবাজারের নিতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য এই দুই হাটে সময়মতো পণ্য নেওয়া যায় না। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে ভ্যানচালকেরা মালামাল নিয়ে যেতে চান না। গেলেও বেশি ভাড়া দিতে হয়।

এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা মানুষ প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় এলজিইডির প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এলজিইডির পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। ভারী যানবাহনের জন্য নতুন নকশায় সড়কটির ওই তিন কিলোমিটারের জন্য আরসিসি ঢালাই করার কথা বলা হয়েছে।

পাটগ্রাম পৌর সদরের বাসিন্দা নুরু মিয়া বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর যাতায়াতের মহাসড়কের বিকল্প সড়কটি। এটি দিয়ে হালকা যানবাহনে সহজেই স্থলবন্দরে যাওয়া যেত। অথচ এখন সড়কই ভাঙাচোরা। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পুরো উপজেলাসহ দেশের দূরদূরান্তের লোকজন।