গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনিসংহ মহাসড়কের কুনিয়া বড়বাড়ী এলাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় এক নারী শ্রমিক নিহত হন।
ওই নারী শ্রমিক হলেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার চরভাঙ্গা ভূঁইয়াকান্দি গ্রামের রুহুল আমিনের স্ত্রী মুনিরা আক্তার (৩০)। তিনি গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় রিট গার্মেন্টেসে কাজ করতেন।
পুলিশ বলছে, নারী শ্রমিকের মৃত্যুর খবরে উত্তেজিত জনতা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার গাড়ির সামনের অংশে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া ৩০ থেকে ৪০টি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরের কুনিয়া বড়বাড়ী এলাকায় আজ সকাল পৌনে ৮টার দিকে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা কাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় সড়ক পার হতে গেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি এক নারী শ্রমিককে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ সময় ওই সড়কে থাকা এক ভ্যানচালক তাঁর নিজের ভ্যান দিয়ে গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও ধাক্কা দেয় গাড়িটি। এতে ওই ভ্যানচালকও গুরুতর আহত হন।
নারী শ্রমিকের মৃত্যুর খবরে আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল ছুড়ে অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি যানবাহনের কাচ ভাঙচুর করেন। পরে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে থানা–পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
এ সময় হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে এলে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও শ্রমিক বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, সড়কের মাঝের একটি লেন বন্ধ করা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শ্রমিকেরা রাস্তা ছেড়ে চলে যান। এরপর ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আজিজুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক বলেন, সড়কের মধ্যে কোনো বিভাজক নেই। সবাই ইচ্ছেমতো সড়ক অতিক্রম করেন। বিআরটির কাজের জন্য মাঝখানের লেন বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেটি খুলে দেওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই বিআরটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঝখানের লেনটি বন্ধ রাখা দরকার।
ওই পথের কয়েকজন যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়ক অবরোধের কারণে উভয় দিকে সকাল পৌনে ৮টা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। অনেক কর্মজীবী মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি প্রতিদিন সকালে ঢাকার বনানী এলাকায় গিয়ে অফিস করেন। কিন্তু সকালে বড়বাড়ী গিয়ে যানজটে পড়েন। পরে বাস থেকে নেমে দেখেন, শ্রমিকদের আন্দোলনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত হেঁটে যান। তাঁর মতো শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।
গাজীপুরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, দুর্ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত একজনকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিলে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।