চারদিকে প্রচণ্ড গরম। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের কোথাও শান্তি নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে নাভিশ্বাস ওঠে। যাঁরা বাইরে কাজ করেন কিংবা ফুটপাতে থাকেন, তাঁদের কষ্ট আরও বেশি। প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে ফলের দোকানের চালে ঘাস চাষ করেছেন ফল ব্যবসায়ী আকুল হোসেন (৪২)। ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই এলাকায় ফুটপাতে তাঁর দোকান।
বাইরে যতই গরম হোক তুলনামূলক তাঁর দোকান ঠান্ডা বলে জানিয়েছেন দোকানি আকুল হোসেন। এতে তাঁর দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনাও বেশি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, আকুল হোসেনের দোকানের ওপরে ঘাস চাষের পদ্ধতিটা খুবই চমৎকার। গরমে তাঁরা যেখানে কষ্ট পাচ্ছেন, কেউ কেউ দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, কিন্তু তিনি (আকুল) তখনো দোকান খোলা রেখে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
আকুল হোসেন ঝিনাইদহ শহরের কোরাপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তিন শতক জমির ওপর সেমিপাকা একটি ঘরে তিনি মা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে বাস করেন। পুঁজি বলতে তাঁর বাড়ি আর ফলের দোকানটি। আকুল হোসেন বলেন, একদিন টেলিভিশনে দেখতে পান ঘরের ছাদে গাছ লাগিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার কৌশল। তা দেখে তাঁর ইচ্ছা জাগে, তিনি তাঁর ছোট্ট দোকানঘর ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করবেন। সেই লক্ষ্যে চার বছর আগে তিনি দোকানের ওপরে থাকা পলিথিনে মাটি দেন। সেই মাটিতে ঘাস লাগিয়ে দেন। তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনে ‘লক্ষ্মী ঘাস’ বলে পরিচিত একধরনের ঘাস লাগিয়ে দেন। সেই ঘাসে মাঝেমধ্যে পানি দেন, এ ছাড়া আর কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না। ঘাসগুলো সবুজ হয়ে আছে মাথার ওপর। দোকানেও বেশ শীতল পরিবেশ।
পাগলাকানাই এলাকার বাসিন্দা গুলজার হোসেন। আকুল হোসেনের দোকান সম্পর্কে গুলজার বলেন, ঘাস লাগিয়ে তিনি শুধু দোকান ঠান্ডা রাখেননি, সৌন্দর্যও বাড়িয়েছেন। দোকানটি পলিথিনের হলেও ঘাসের কারণে বাইরে থেকে দেখতে ভালো লাগছে।
দোকানের ক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তার ধারের দোকান হলেও ঘাস লাগিয়ে দোকানদার দোকান ঠান্ডা করে রেখেছেন। তাই প্রচণ্ড রোদ ও গরমে সারাক্ষণ দোকানে থাকতে পারেন। তাঁরাও দোকানটি সব সময় খোলা পাওয়ায় এখানেই ছুটে আসেন।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম আকুল হোসেনের। ছোটবেলায় হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি যাত্রীবাহী বাসে কলা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি গাড়িতে হকারি করেছেন। এরপর নিজে একটি ভ্যানগাড়ি কিনে সেই ভ্যানে কলা বিক্রি করতেন। ১৫ বছর এভাবে ভ্যানে করে পাকা কলা বিক্রি করেছেন। ২০১২ সাল থেকে তিনি ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই মোড়ে রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে দোকান বসিয়ে সেখানে ফল বিক্রি করে আসছেন।
সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। দোকানটি তৈরি করতে তাঁকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এরপর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বাহারি ফল দোকানে উঠান। তাঁর দোকানে বিক্রিও বেশ ভালোই।আকুল হোসেন, ফল ব্যবসায়ী
আকুল হোসেন বলেন, সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। দোকানটি তৈরি করতে তাঁকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এরপর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার বাহারি ফল দোকানে উঠান। তাঁর দোকানে বিক্রিও বেশ ভালোই।
দোকানের চালে একবার শুধু ঘাস লাগিয়ে দিয়েছেন আকুল। এর পর থেকেই ঘাস প্রাকৃতিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে ঘাস ছেঁটে দেওয়া প্রয়োজন হয়। তাঁর দোকানে বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার ফল আছে। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হচ্ছে, যা থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হচ্ছে। এই দিয়ে চলছে তাঁর সংসার।