দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় নির্বাচনী এলাকায় হঠাৎ তত্পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, কমিটি গঠন, পথসভা ও দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন, রিকশা বিতরণসহ নানা কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন তাঁরা। গত এক সপ্তাহজুড়ে কুমিল্লার অন্তত তিনটি আসনে আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তাঁরা নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয় চলতি বছরের ৯ এপ্রিল। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেই ওই কমিটিতে সহসভাপতি হন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি তৈরির শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস কিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম। এরপর গত ৩ জুন কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) নির্বাচনী এলাকার আড্ডা ডিগ্রি কলেজ মাঠে বিশাল শোডাউন করেন তিনি। ঈদের পর তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যান। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। গত শনিবার তিনি বরুড়ার পয়ালগাছা পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ মাঠে হতদরিদ্রদের মধ্যে রিকশা, সেলাই মেশিন ও রোগীদের মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ করেন। বক্তব্যে তিনি কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে উল্লেখ করেন। এ সময়ে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান আবু তাহের, বরুড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ, বরুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বাহাদুরুজ্জামান। এই আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন তাঁর গ্রামের বাড়ি সোনাইমুড়িতে বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেন। তিনি গত সোমবার উপজেলার পেরপেটি, আড্ডা, ঝলম, বরুড়া, আমড়াতলি বাজারে গণসংযোগ ও মিছিল করেন। এই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরীও গণসংযোগ করেন।
নতুন করে সীমানা নির্ধারণ হওয়ায় এবার হোমনা ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-২ আসন। আগে কুমিল্লা-২ আসন ছিল হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে। এই আসনের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ। তিনি প্রথমবারের মতো খোলা জিপে করে গত শনিবার মেঘনার বিভিন্ন এলাকায় শোডাউন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও জেলা পরিষদের সদস্য কাইয়ুম হোসেন।
২০২০ সালের জানুয়ারির পর কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই) আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নির্বাচনী এলাকায় চারবার এসেছেন। গত বছরের ২১ নভেম্বর, ৭ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর ও সর্বশেষ চলতি মাসের ২ জুলাই অর্থমন্ত্রী লালমাই উপজেলার দুতিয়াপুরে তাঁর বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি নাঙ্গলকোটের বটতলি এ মতিন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কর্মিসভায় বক্তব্য দেন। অর্থমন্ত্রী ৬ জুলাই তাঁর সহকারী একান্ত সচিব পদে রদবদল করেন। আগের সহকারী একান্ত সচিব ও লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম সিংহ রতনকে পুনরায় নিয়োগ দেন। এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া ঈদের পরে দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী লালমাইয়ে চারটি ইউনিয়নে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বাধার সম্মুখীন হন। ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছিলেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। হঠাৎ তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলায় গণসংযোগ করেন।