জনবলসংকট, সিদ্ধান্তহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আইসিইউ চালু হচ্ছে না বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) উদ্বোধন করা হয় আট বছর আগে। লাইফ সাপোর্টের ভেন্টিলেটর, মনিটরসহ প্রয়োজনীয় সব আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে সেখানে। এরপরও উদ্বোধনের পর থেকে আইসিইউ কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এ কারণে মুমূর্ষু রোগীদের বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে নিতে হয়।
জনবলসংকট, সিদ্ধান্তহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আইসিইউ চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইসিইউতে থাকা কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে মুমূর্ষু রোগীদের আইসিইউ ও এইচসিইউ সেবা নিতে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সভায় আইসিইউ চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আট বছরেও এটি চালু হয়নি।
এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আইসিইউর যন্ত্রপাতির কোনটার কত দাম, সেটা আমাদের জানা নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওই সব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।’
সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের দক্ষিণ পাশের একটি ভবনের তৃতীয় তলার দেয়ালে লেখা আইসিইউ। সেখানকার একটি কক্ষে এই ইউনিটের কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে। ভেতরে ঢোকার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েও পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি আইসিইউর উদ্বোধন করেন প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। জনবল না থাকায় ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৭৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আইসিইউ চালু না করার কারণে মুমূর্ষু রোগীদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। ওই হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেক রোগী পথে মারা যান।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আইসিইউ কক্ষের ভেতরে মোট চারটি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আইসিইউ ও দুটি উচ্চমাত্রার নির্ভরশীল (এইচডিইউ) শয্যা। প্রতিটি শয্যার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগানো রয়েছে।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইসিইউ চালুর জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানসহ ১০ জন লোক প্রয়োজন। যেটা নিয়োগ দেওয়া যায়নি। একটি কক্ষের করা আইসিইউর ক্ষেত্রে জায়গারও সংকট রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেওয়ার জন্য চিকিৎসকসহ অন্যদের কক্ষের দরকার, যা সেখানে নেই। এ ছাড়া ওই কক্ষে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো এখন সচল আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৩ এপ্রিলও চিঠি দিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে জামালপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অজয় পাল প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ২৬ লাখ মানুষের বসবাস। আট বছর আগে আইসিইউ ইউনিটটি উদ্বোধন করা হলেও এক দিনের জন্যও রোগীরা এর সেবা পাননি। আইসিইউতে থাকা সব যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালটিতে আইসিইউ চালু না থাকায় জেলার অনেক রোগীকে ময়মনসিংহ বা ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। অনেক দরিদ্র রোগীর পক্ষে ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। আইসিইউ চালুর বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।