গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আবারও বাচ্চা দিয়েছে জলহস্তী। সাফারি পার্ক সূত্র জানিয়েছে, ১৪ অক্টোবর জলহস্তী শাবকের জন্ম হয়েছে। এ ছাড়া নীলগাই, কমনইল্যান্ড, ওয়াইল্ডবিস্ট ও জেব্রা পরিবারেও এসেছে নতুন অতিথি। পার্ক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় প্রাণীগুলো শাবক জন্ম দিচ্ছে। সাফারি পার্ক আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের লেকের পানিতে মায়ের সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছে জলহস্তী শাবক। কিছুক্ষণ পরপর পানিতে মায়ের পাশে মাথা তুলে শব্দ করে আবার পানিতে ডুব দেয়। সূত্র জানায়, সদ্যোজাত বাচ্চাটির লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর সাফারি পার্কে একটি জলহস্তীর জন্ম হয়।
সাফারি পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সপেক্টর রাজু আহমেদ বলেন, জলহস্তী ১০ মাস ধরে গর্ভধারণ করে। এরা প্রকৃতিতে বাঁচে ২০ থেকে ২৫ বছর। সংরক্ষিত জায়গায় আরও বেশি দিন বাঁচার নজির আছে। এরা একসঙ্গে একটি বাচ্চা জন্ম দেয়। জলহস্তী তৃণভোজী। একবার ডুব দিয়ে পানির নিচে এরা ৫ মিনিটের বেশি থাকতে পারে। এদের বসতি মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন বনাঞ্চল। পার্কের প্রতিষ্ঠাকালে দুটি জলহস্তী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয়েছিল। বর্তমানে সাফারি পার্কে জলহস্তীর সংখ্যা ৪।
জোড়া বাচ্চা দিল নীলগাই
বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকায় থাকা নীলগাই পরিবারে এসেছে দুই অতিথি। ৭ অক্টোবর সাফারি পার্কে একটি বাচ্চা জোড়া জন্ম দেয় মা নীলগাই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া নীলগাই এনে সাফারি পার্কে রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ আগস্ট নীলগাইয়ের পরিবারের দুই নতুন সদস্য এসেছিল। এখন সাফারি পার্কে এই পরিবারের সদস্যসংখ্যা আটটিতে দাঁড়িয়েছে।
পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার আনিছুর রহমান বলেন, একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই প্রাণীদের দেখা পাওয়া যেত হামেশা। পুরুষ নীলগাইয়ের রং গাঢ় ধূসর। অনেকটা কালচে রঙের। এদের শরীরে অনেক সময় নীলচে আভা দেখা যায় বলেই এদের নামকরণ করা হয়েছে নীলগাই। পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা ৫২ থেকে ৫৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এদের শিংয়ের দৈর্ঘ্য হয় ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। স্ত্রী নীলগাইয়ের রং লালচে বাদামি হয়। হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এরা মিলিত হয়। এদের গর্ভধারণকাল ২৪৩ দিন। নীলগাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জোড়া বাচ্চার জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলোর জন্ম হওয়ার ৪০ মিনিট পরেই দাঁড়াতে পারে। পুরুষ নীলগাই তিন বছর আর স্ত্রী নীলগাই দুই বছরের মধ্যেই প্রজননের সক্ষম হয়। নীলগাইয়ের গড় আয়ু সাধারণত ২১ বছর।
বাচ্চা দিয়েছে ওয়াইল্ডবিস্ট
২০ অক্টোবর ওয়াইল্ডবিস্ট পরিবারে একটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। এর লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। বাচ্চাটি সুস্থ আছে। এ নিয়ে পার্কে ওয়াইল্ডবিস্টের সংখ্যা হলো ১২। জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি সারাক্ষণ মায়ের পাশাপাশি ঘুরে বেড়ায়। ইতিমধ্যে এটি হাঁটতে ও দৌড়াতে শিখে গেছে। বাচ্চা মায়ের দুধ পান করছে। কিছুদিনের মধ্যেই মায়ের কাছ থেকে অন্যান্য খাবার খাওয়া শিখে যাবে।
পার্ক সূত্র জানায়, ওয়াইল্ডবিস্ট তৃণভূমিতে একসঙ্গে পাল ধরে চলাফেরা করে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় সাধারণত ১৯ কেজির মতো। প্রথমে বাচ্চার গায়ের রং ধূসর (টনি ব্রাউন) এবং পূর্ণবয়স্ক হলে বর্ণ হয় নীলাভ ধূসর। প্রসবের কয়েক মিনিট পর শাবকটি উঠে দাঁড়ায় এবং দৌড়াতে শুরু করে।
জেব্রার পালে আরও দুই বাচ্চা
সম্প্রতি সাফারি পার্কে জেব্রার পালে দুটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। এর একটি গত ৫ সেপ্টেম্বর ও অপরটি ১৩ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয়। নতুন দুই সদস্যসহ বর্তমানে পার্কে জেব্রার সংখ্যা ২৯। এদের মধ্যে ১৩টি স্ত্রী ও ১৬টি পুরুষ। গত বছরের শুরুতে একসঙ্গে বেশ কিছু জেব্রার মৃত্যু হওয়ায় এই পালে প্রাণিসংকট দেখা দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জেব্রার পাল থেকে নিয়মিত বাচ্চা পাওয়ায় এই সংকট কেটে গেছে বলে জানিয়েছে পার্ক–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাচ্চা দিয়েছে কমনইল্যান্ড
এর আগে গত ৯ আগস্ট পার্কের কোর সাফারিতে কমনইল্যান্ড একটি বাচ্চা দিয়েছে। নতুন সদস্যসহ বর্তমানে পার্কে কমনইল্যান্ড চারটি। এদের মধ্যে দুটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী। সরেজমিন দেখা যায়, মায়ের পাশাপাশি হেঁটে বেড়াচ্ছে বাচ্চাটি। কারও উপস্থিতি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা বাচ্চাকে নিয়ে দ্রুত দৌড়ে ঝোপের আড়ালে চলে যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কমনইল্যান্ড সাধারণত একসঙ্গে একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। এদের গর্ভকাল ৯ মাস। বন্য পরিবেশে এদের গড় আয়ু ২০ থেকে ২৫ বছর। নারী কমনইল্যান্ড ২ থেকে ৩ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয় চার থেকে পাঁচ বছরে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার কারণে নিয়মিত বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নীলগাই আমাদের প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত। এই প্রাণীও বেশ কয়েকবার বাচ্চা দিয়েছে। এভাবে নিয়মিত বাচ্চা পেলে সাফারি পার্ক আরও সমৃদ্ধ হবে। এতে দর্শনার্থীরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবে।’