আক্কেলপুরে ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির দুটি পক্ষের সংঘর্ষ হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত কলেজ বাজার দলীয় কার্যালয় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন আক্কেলপুর পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন, সদস্য আনিছুর রহমান, আলম হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা বিএনপির সদস্য আমিনুর রশিদ ওরফে ইকু, জুলফিকার আলী ওরফে শ্যামল, মিনা হোসেন, রবিন হোসেন, সোহেল রানা ও মামুনুর রহমান। তাঁদের মধ্য জুলফিকার আলীকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেয় পৌর বিএনপি। একতরফা ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় ওয়ার্ড সম্মেলনের আয়োজনের অভিযোগ তুলে দলটির একটি পক্ষ তাতে বাধা দেয়। গত ১৭ অক্টোবর প্রথম দিনে রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পৌরসভার ১-২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলন ঘোষণা করে পৌর বিএনপি। একই দিনে একই সময় রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাল্টা প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয় অপর পক্ষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে দলটির কোনো পক্ষই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। পরে পৌর বিএনপি স্থানীয় সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলন করে ওই তিনটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিএনপির দুটি পক্ষের সংঘর্ষের মুহূর্তের চিত্র। একপক্ষের কর্মীকে ফেলে লাঠিপেটা করছে অপরপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে

আজ পৌরসভার আরও তিনটি ওয়ার্ডের সম্মেলন চকেশা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে করার ঘোষণা করে পৌর বিএনপি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে স্থান পরিবর্তন করে কলেজ বাজারের কাঁচাবাজারের দলীয় কার্যালয় সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিকেল চারটায় দলীয় কার্যালয়ে সম্মেলন শুরু হয়। তখন দলটির অন্য পক্ষের নেতা-কর্মীরা তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্য ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানার নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আক্কেলপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর চৌধুরী বাদশা বলেন, ‘আজকে বিকেলে পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল দলীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। হঠাৎ বিকেল চারটার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের নেতা-কর্মীরা আহত হয়েছেন। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে তিনটি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করেছি। যারা হামলা করেছে, তাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই, তারা সন্ত্রাসী। আমরা বিচার দাবি করছি।’

পৌর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মামুনর রহমান বলেন, ‘আক্কেলপুর পৌর বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সুযোগসন্ধানী ও যাঁরা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছিলেন, তাঁদের নিয়ে আজকে একতরফাভাবে কমিটি ঘোষণা পাঁয়তারা করছিল। আমরা তাতে বাধা দিতে গিয়েছি। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমিসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন করে কমিটি গঠন করার দাবি করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা সেটি না করে ঘরোয়াভাবে পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।’

আক্কেলপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানা বলেন, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম নিয়ে উপস্থিত হওয়ার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।