রোদে পুড়ে গেছে পাটগাছ

খরার কারণে পাটগাছে ‘মাইট’ নামের একধরনের খুদে পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একই কারণে পাটের বৃদ্ধিও ঠিকমতো হয়নি।

রংপুরে প্রচণ্ড রোদ আর অসহ্য গরমে নাকাল মানুষ। নগরের সড়কে মানুষের তেমন আনাগোনা নেই। নেই চিরচেনা জটলা। এই গরমে জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। নগরের সিটি বাজারের সামনে গতকাল শুক্রবার বিকেলে

পাটের দাম বাড়ছে দেখে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরকালিদাসখালী গ্রামের বর্গাচাষি আশরাফুল হক তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর প্রচণ্ড খরতাপের কারণে তাঁর জমির পাটগাছ খর্বাকৃতির হয়ে আছে। গরমে তাঁর জমির বেশির ভাগ পাটগাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

আশরাফুলের মতো অনেক চাষি এবার বেশি করে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু খরায় তাঁদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চর এলাকার চাষিদের। কৃষিবিদেরা বলছেন, খরার কারণে পাটগাছে ‘মাইট’ নামের একধরনের খুদে পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। একই কারণে পাটের বৃদ্ধিও ঠিকমতো হয়নি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

এর মধ্যে বাঘার চরে ২ হাজার হেক্টর এবং চকরাজাপুর চরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। চর এলাকার মধ্যে পড়েছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের পুরো এলাকা, গড়গড়ি, মনিগ্রাম ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের অংশবিশেষ। এই চর এলাকায় খরায় পাটের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

খরায় এবার পুড়ে গেছে পাটগাছ। সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরকালিদাসখালীর মাঠে

চাষিরা বলছেন, গত বছর পাটের দাম ৪ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত উঠেছিল। এক বিঘা জমিতে সাধারণত ১০ থেকে ১২ মণ পাট হয়ে থাকে। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার চাষিরা বেশি করে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু খরার কারণে পাট যেমন পুড়ে নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পাট জাগ দেওয়ার পানিরও সংকট দেখা দেবে। গর্ত করে তাতে পানি সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে গেলে চাষিদের আর লাভ থাকবে না। এ জন্য এবার পাটচাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৩১১ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছর বৃষ্টির মৌসুম পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে খুবই কম। শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ দৈনিক বৃষ্টিপাতের হিসাব রাখেন। তাঁর হিসাবমতে, রাজশাহীতে ২০২০ সালের আষাঢ় মাসে ২১ দিন, ২০২১ সালে ১৯ দিন আর এবারের আষাঢ়ে মাত্র ১১ দিন বৃষ্টি হয়েছে। তা–ও পরিমাণে কম। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাটচাষিরা।

দিঘা নওদাপাড়া গ্রামের পাটচাষি শামসুল ইসলাম বলেন, ‘পানির অভাবে আমারে ভুঁইয়ের পাট মইরি যাচ্ছে। তারপরে যা আছে, তা–ও আবার জাগ দেওয়ার পানি নাই। সরকার যদি কাঁচা পাট কেনে, তাহলে আমরা বাঁচি। আমার তিন বিগি ভুঁইয়ে পাট আচে। মাঠে ব্যাপক পাট আচে।’

বাঘার কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, খরার কারণে পাটে ‘মাইট’ নামের একধরনের পোকার উপদ্রব হয়েছে। এখন পাটের জন্য জোরে বৃষ্টি দরকার। এ ছাড়া খরার কারণেও এবার পাট বড়তে পারেনি। যাঁদের জমিতে পাট ভালো আছে, তাঁরাও জাগ দেওয়ার পানি নিয়ে সংকটে পড়বেন। সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে চাষিদের অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে।

দাবদাহে মরে যাচ্ছে চারা

প্রতিনিধি, নাটোর জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলায় দাবদাহে রোপা আমনের বীজতলায় থাকা চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় চারাবীজ উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে বীজ বপন করা যাচ্ছে না। আবার যেসব স্থানে ইতিমধ্যে বীজ বপন করা হয়েছে, সেগুলোর চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এবার ৩ হাজার ৮৪৯ হেক্টর জমিতে বোনা আমনের চাষ হয়েছে। অধিকাংশ জমিতে অনাবৃষ্টির ফলে চারা বাড়ছে না।

উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কলেজশিক্ষক মখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার ১৩ বিঘা চাষের জমির প্রায় সবই বিলের মাঝে। বোনা আর রোপা আমনই ভরসা। কিন্তু অনাবৃষ্টির ফলে রোপা আমনের বীজ বপনই করতে পারছি না।’