দ্রুতগামী লেনে নামিয়ে দেওয়া যাত্রীদের উঁচু সড়ক বিভাজক টপকানো ছাড়া উপায় থাকে না। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে
দ্রুতগামী লেনে নামিয়ে দেওয়া যাত্রীদের উঁচু সড়ক বিভাজক টপকানো ছাড়া উপায় থাকে না। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে

যে কারণে টাকা দিয়ে হলেও সড়ক বিভাজক টপকাচ্ছেন যাত্রীরা

আট লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানের চারটি লেন নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্রুতগামী যানবাহন চলাচলের জন্য। দুই পাশের বাকি চারটি লেন (সার্ভিস লেন) লোকাল যানবাহন চলাচল ও যাত্রী ওঠানামার জন্য। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে নিয়ম ভেঙে মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্ন লেনে যাত্রীদের নামিয়ে যাচ্ছেন পরিবহনের শ্রমিকেরা। ফলে মাঝখানের এই লেন থেকে এক পাশে যেতে সড়ক বিভাজক টপকানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না যাত্রীদের।

আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইলে অবস্থান করে উঁচু সড়ক বিভাজক টপকাতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে। টাকার বিনিময়ে মই দিয়ে সড়ক বিভাজক পারাপারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শিমরাইলের ওই স্থানে হাইওয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ-আনসার সদস্যের সামনেই দ্রুতগামী লেনে গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রী নামানো ও তুলতে দেখা গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের উঁচু সড়ক বিভাজক পারাপার হতে হচ্ছে। এতে নারীসহ বয়স্কদের পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এলোমেলো পার্কিংয়ের কারণে সার্ভিস লেনে প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহনের চালকেরা যাত্রী নামাতে সার্ভিস লেনে প্রবেশ করতে চান না। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুতগামী লেনে যাত্রী নামানো ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম ভেঙে দ্রুতগামী লেনে যাত্রী নামানোয় আজ ১৯টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে দ্রুতগামী যানবাহনের লেনে টাকার বিনিময়ে মই দিয়ে চার ফুট উঁচু সড়ক বিভাজক পারাপারের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ রবিউল হোসেন নামের এক তরুণকে দুটি মইসহ আটক করে।

আজ সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে শিমরাইলে হাইওয়ে পুলিশের একজন পরিদর্শকসহ পাঁচ পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথের চারজন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দূরপাল্লার গাড়ি থেকে দ্রুতগামী লেনে যাত্রী নামাতে যাতে না পারেন, তাঁরা সে ব্যাপারে তৎপরতা চালাচ্ছেন। সার্ভিস লেনের ঢাকাগামী ও চট্টগ্রামগামী অংশে সড়কে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। সেখানে যানবাহনের জট দেখা গেছে।

পুলিশ মোতায়েনের পরও দ্রুতগামী লেনে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ হয়নি। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তিশা পরিবহনের বাসে করে বেলা ১১টার দিকে শিমরাইলে নামেন গৃহিণী মারিয়া আক্তার। তাঁর মেয়ে সামিহা সিদ্ধিরগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়ে। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে তিনি এখানে এসেছেন। বাস তাঁকে দ্রুতগামী লেনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এখন তিনি উঁচু সড়ক বিভাজক পার হতে পারছেন না। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন যাত্রী দ্রুতগামী লেনে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরুষ যাত্রীরা অনেক কষ্টে উঁচু বিভাজক টপকে যেতে পারলেও নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশুরা বিপাকে পড়েন।
মারিয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বাসের চালক তাঁকে এখানে নামিয়ে দিয়েছেন। এখন উঁচু সড়ক বিভাজক পার হতে পারছেন না। আগে সড়ক বিভাজকের অংশ ফাঁকা থাকলেও সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করছে, ভয় লাগছে। কীভাবে পার হবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

রূপগঞ্জের তারাব থেকে আসা মো. ফখরুল ও তাঁর স্ত্রী সালমা বেগমকেও একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেল। সালমা বলেন, অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসক দেখাতে বাসে করে শিমরাইল এসেছেন। উঁচু সড়ক বিভাজকের কারণে পার হতে পারছেন না। কেউ সহযোগিতাও করছে না। বাসচালক কেন তাঁদের লোকাল লেনে নামিয়ে দিলেন না, প্রশ্ন তোলেন তিনি।

এলোমেলোভাবে যানবাহন রাখার কারণে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে

শিমরাইলে দায়িত্বরত আসনার সদস্যদের একজন দুলাল হোসেন বলেন, কেউ যাতে দ্রুতগামী লেনে নামতে না পারেন, সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। অনেক বাস দূরে গিয়েও যাত্রী নামিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকামুখী দ্রুতগামী লেনের গাড়িকে লোকাল লেনে আসতে হলে কাঁচপুর সেতুর কাছে লেন বদলাতে হয়। অপর দিকে চট্টগ্রামমুখী গাড়িকে সাততলার সামনে লোকাল লেনে ঢুকতে হয়। যানজটের কারণে অধিকাংশ দূরপাল্লার গাড়ি লোকাল লেনে ঢুকতে চায় না। তারা দ্রুতগামী লেনে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের দ্রুতগামী লেনের সড়ক বিভাজক পার হতে হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রবিউল হোসেনসহ কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে ৫ টাকা, ১০ টাকার বিনিময়ে মই দিয়ে সড়ক বিভাজক পারাপার করছিলেন। তাঁরা ১০-১৫ দিন ধরে যাত্রী পারাপার করছিলেন।

টাকার বিনিময়ে মই দিয়ে পথচারীদের সড়ক বিভাজক পার করা হচ্ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে

নীলাচল এক্সপ্রেস নামের একটি বাসের চালক টুটুল হোসেন বলেন, লোকাল লেনে এলোমেলোভাবে গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। ফলে যানজটের কারণে দূরপাল্লার অনেক গাড়ি ঢুকতে চায় না।

শিমরাইলে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, লোকাল লেনে গাড়ি ঢুকলেই ১৫ থেকে ২০ মিনিট যানজটে আটকা পড়ে থাকে। গাড়ির যাত্রীরা লোকাল লেনে ঢুকলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এ কারণে দূরপাল্লার গাড়িগুলো লোকাল লেনে ঢোকে না। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ সড়ক বিভাজকের ফাঁকা অংশটি বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।  

দ্রুতগামী লেনে গণপরিবহন থেকে যাত্রী নামানো ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের তৎপরতা। আজ সোমবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতগামী লেন থেকে লোকাল লেনে যাতায়াতের পকেট গেট রাখা হয়েছিল। কিন্তু অবৈধ পার্কিং ও জটলা থেকে যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিগগিরই সড়ক বিভাজকে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে। যাত্রী ও গণপরিবহনের সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

দ্রুতগামী লেনে যাত্রী নামানোর ঘটনায় মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত ১৯টি বাসসহ গত দুই দিনে ৬৩টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। যেখানে পুলিশ ও আনসার উপস্থিত আছে, সেখানে বাস থামানো হচ্ছে না। দূরে গিয়ে যাত্রী নামানো হচ্ছে।