নৌকার টিকিট না পাওয়া মাহবুবুর হেলিকপ্টারে ফিরলেন কলাপাড়ায়

হেলিকপ্টারে করে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ফেরেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরদিনই ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি এলাকায় ফিরেছেন। আজ সোমবার বিকেল চারটায় তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি কলাপাড়া পৌর শহরের হেলিপ্যাড মাঠে অবতরণ করে। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী প্রীতি রহমান ও মেয়ে আনিকা মাহবুব।

মাহবুবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য মাহবুবের ওপর তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। এ কারণে তিনি দ্রুত ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকায় চলে এসেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আসনটিতে এবার অন্তত ১৮ নেতা-কর্মী দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মাহবুবুর রহমান। তিনি এই আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু এবারও দল বেছে নিয়েছে বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য মহিববুর রহমানকে। মাহবুবুর ও মহিববুর রহমান আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই।

মাহবুবুর রহমান হেলিকপ্টারে করে কলাপাড়ায় পৌঁছানোর পর তাঁর অনুসারী উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক তাঁকে বরণ করেন। এরপর নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিয়ে কলাপাড়া পৌর শহরের হেলিপ্যাড মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং মিছিলকারীরা স্লোগানে স্লোগানে এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন।

মাহবুবুর রহমান মিছিল শেষে কলাপাড়া পৌর শহরের কুমারপট্টি এলাকার বাসভবনে ফেরেন। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার সময় তাঁর বাসভবনে তিনি পূর্বনির্ধারিত একটি সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর বাসভবনের সামনে শত শত নেতা-কর্মীর ভিড় লক্ষ করা যায়। এসব নেতা-কর্মী সংসদ নির্বাচনে মাহবুবুর রহমানের প্রার্থী হওয়ার জন্য স্লোগান দিচ্ছিলেন।

নিজ বাসভবনে আয়োজিত সভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য যেভাবে আবেগ-ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আমি অবশ্যই তার মূল্যায়ন করব।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করার জন্য নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি দলের যেসব জ্যেষ্ঠ নেতা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।’

অনুসারীরা চান স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করুন মাহবুবুর। কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, দলের সভানেত্রী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। এর ফলে দলের কারও এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা নেই। মাহবুবুর রহমান স্বতন্ত্র হিসেবে যাতে নির্বাচন করেন, সে জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। এ জন্য সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম হুমায়ুন কবীর বলেন, এ জনপদে মাহবুবুর রহমান একজন যোগ্য ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে যেহেতু বাধা নেই, সেহেতু মাহবুবুর রহমান নির্বাচন করতেই পারেন। আগামী দু–এক দিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।