আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাককে নিয়ে অশালীন বক্তব্য ও পেটানোর হুমকি দিয়েছেন টাঙ্গাইল–৪ (কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
লতিফ সিদ্দিকীর হুমকির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কালিহাতী, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত মঙ্গলবার লতিফ সিদ্দিকীর কয়েকজন অনুসারীকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে কালিহাতী থানার সামনে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে বসে পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় তাঁর কয়েক শ অনুসারী রাস্তার ওপর বসে পড়েন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতা–কর্মী সড়ক অবরোধের প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থানস্থলের দিকে রওনা হলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি নেতা–কর্মীদের সামনে আব্দুর রাজ্জাককে হুমকি দিয়ে কথা বলেন।
ছড়িয়ে পড়া পৌনে দুই মিনিটের ভিডিওতে লতিফ সিদ্দিকীকে বলতে শোনা যায়, ‘রাজ্জাককে আমি পেটাব। ও কত বড় নেতা হইছে? ...আমার টাকায় পড়াশোনা কইরা ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারবাদী হইছে। আমি যাইয়া শেখ হাসিনারে বলছি যে, ও ভুল করছে, ঠিক আছে। বেইমানেরা....?’
ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ বিকেলে লতিফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কিছু বলি নাই। আমি কিছু বলব না।’ এরপর তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ ঘটনায় কালিহাতী ও আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা মধুপুর ও ধনবাড়ী এলাকার নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল–৪ আসনের প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর মধ্যে ভদ্রতা, শিষ্টাচার বলে কিছু নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে নিয়ে এমন কথা বলায় নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ। জেলার নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা লতিফ সিদ্দিকীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে কর্মসূচি দেবেন।
মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াকুব আলী বলেন, আব্দুর রাজ্জাক ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা করেছিলেন। এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো তিনি এমন কথা বলেছেন। যাঁদের মধ্যে ন্যূনতম শালীনতা আছে, তাঁরা এমন কথা বলতে পারেন না।
ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর মতো প্রবীণ একজন রাজনীতিকের মুখে এমন অশ্লীল কথাবার্তা তাঁরা আশা করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা এর প্রতিবাদ জানাবেন।
ওই বক্তব্যের ব্যাপারে লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারীরা জানান, লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে সমর্থন দেন। এখানকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রীর আত্মীয় হন। তিনি লতিফ সিদ্দিকীকে হারাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। ওই দিন লতিফ সিদ্দিকীর অনুসারীদের আটকের পেছনেও হয়তো কৃষিমন্ত্রীর হাত ছিল। এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে লতিফ সিদ্দিকী এমন কথা বলতে পারেন।
টাঙ্গাইল–৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী ট্রাক প্রতীকে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট।