কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় ঠাঁই নিয়েছেন বানভাসি লোকজন। গত শুক্রবার বিকেলে আলোর পাঠশালায়
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় ঠাঁই নিয়েছেন বানভাসি লোকজন। গত শুক্রবার বিকেলে আলোর পাঠশালায়

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আলোর পাঠশালায় ঠাঁই নিয়েছে ২৬ পরিবার

উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে, ধরলা নদীর দুটি পয়েন্টে এবং দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আড়াই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। অনেকেই ঈদগাহ মাঠ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। কুড়িগ্রামের প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় ঠাঁই নিয়েছে ২৬টি পরিবার।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবেজ উদ্দীন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলার ২৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আর ২৬৫টি বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালাসহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবহার করা হচ্ছে।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার এবং হাতিয়া পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব বানভাসি মানুষের কারও ঘরে বুকসমান পানি আবার কারও ঘরে কোমরসমান পানি। বানভাসি লোকজন ঘরের ভেতরে উঁচু টং করে, ছোট নৌকায় ও কলার ভেলায় রাত কাটাচ্ছেন। যাঁদের নৌকা ও টং করার ব্যবস্থা নেই তাঁরা ঠাঁই নিয়েছেন বিভিন্ন বিদ্যালয় ও ঈদগাহ মাঠে।

আলোর পাঠশালার বারান্দায় গবাদিপশু রাখা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গোলাপ রহমান (৩৮)। তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে গঙ্গাধর নদের ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে পাশের ঈদগাহ মাঠে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু উজানের ঢলে বন্যার পানি বেড়ে ঈদগাহ মাঠ তলিয়ে গেছে। পরে ছোট ছেলেমেয়ে ও গরু-বাছুর নিয়ে এক সপ্তাহ হলো আলোর পাঠশালায় আশ্রয় নিয়েছেন। বানভাসি মানুষের জন্য পাঠশালার সব কক্ষ খুলে দেওয়া হয়েছে।

আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, প্রতিবছর বন্যার সময় আলোর পাঠশালার পাঠদান কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ রেখে সেখানে বানভাসি মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে শ্রেণিকক্ষগুলো খুলে দেওয়া হয়। এই চরের মানুষের আলোর পাঠশালায় যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন পাঠশালায় ২৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি বেড়ে গেলে সেখানে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বেড়ে ঘোগাদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব বানভাসি পরিবার বিভিন্ন সরকারি আবাসন ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। কিছু বানভাসি মানুষ প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় আশ্রয় নিয়েছে।