কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে গত বুধবার ভেড়ামারা শহরে অন্তত পাঁচটি বাড়িতে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে অন্তত দুটি বাড়ির তিনজন ভাড়াটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু এসব ঘটনায় থানায় কেউ মামলা করেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দফায় দফায় যেভাবে হামলা ও ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁরা খুবই ভয়ে ছিলেন। এ জন্য কেউই মামলা করার সাহস পাননি।
২ আগস্ট রাতে ভেড়ামারা উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় পূর্ববিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকসহ (৩৭) তিনজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সঞ্জয় ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান। হামলার ঘটনায় সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে বাদী হয়ে যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন। মোস্তাফিজুর বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে ভেড়ামারা শহরে তাণ্ডব চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের কাছারিপাড়ায় অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানের চাচা নুরুল ইসলাম ও মৃত বিপ্লব হোসেনের তিনতলা পৃথক দুটি ভবন। পৃথক লোহার ফটক। নুরুলের বাড়িতে নিচতলায় একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে ভাড়া দেওয়া। দোতলায় একজন চিকিৎসক থাকেন। তিনতলায় থাকেন নুরুলের পরিবার। এই ভবন-সংলগ্ন মৃত বিপ্লব হোসেনের বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন একটি কলেজের শিক্ষক। দোতলায় থাকেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
বিপ্লব হোসেনের মা মনোয়ারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুজন ছেলে আসে। তাঁদের হাতে পেট্রল ছিল। তাঁরা নাম-পরিচয় জানতে চাইলে আমি কৌশলে ভাড়াটে বলি। এরপর ঘরের ভেতর ঢুকে তারা আগুন দেয়। আধা ঘণ্টা পর আবার ৬০ থেকে ৭০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। এবার ভাঙচুর করে। নিচতলার দরজার অর্ধেক ভাঙে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ভবনের আরেক বাসিন্দা বলেন, তিনি তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে পেছনের দিকের ঘরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে থেকে প্রধান দরজা ভাঙে। তবে কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেনি। এ সময় তিনি ভয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলেন। তিনি বলেন, হামলাকারীরা একপর্যায়ে দোতলায় ওঠে এবং দোতলার তিনটি কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সবকিছু নিমেষেই পুড়ে যায়। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা চাকরির জন্য বাসার বাইরে ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে গেছে। কাচের টুকরা ছড়ানো-ছিটানো। খাট, চেয়ার, টেবিলসহ নামীদামি আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে আছে।
পাশেই নজরুল ইসলামের ভবনের নিচতলায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মিলন হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি কার্যালয়ে ছিলেন। কয়েকজন যুবক ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তাঁরা কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে বাইরে চলে যান। কম্পিউটারসহ সব আসবাব ভাঙচুর করা হয়। চলে যাওয়ার সময় কার্যালয়ে থাকা ১০টি মোটরসাইকেলের হেলমেট নিয়ে যায়। তাদের কেউ কেউ সেগুলো মাথায় পরে নেয়। বারবার ভাড়াটের কথা বললেও তারা কর্ণপাত করেনি। এভাবে দুই দফা হামলা করে। শেষ দফায় পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করেনি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আগের মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় ভেড়ামারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে পূজা উদ্যাপন পরিষদ। উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা থাকলেও তারা দিনক্ষণ জানায়নি। বর্তমানে শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।