কোটা আন্দোলনকে ঘিরে অসহযোগ কর্মসূচিতে নিহত শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে অসহযোগ কর্মসূচিতে নিহত শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান

‘জোয়ান ছেলেডারে কবরে নামাইলাম’

স্বামীকে হারানোর পর থেকে আফনানকে ঘিরেই নাছিমা আক্তারের জগৎ। স্বামীর মৃত্যুর দুই মাস পর একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন। একটু দূরে স্বজনেরা হাউমাউ করে কাঁদছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আশপাশের লোকজন। ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে বড় বোন জান্নাতুল মাওয়াও শোকে মুষড়ে পড়েছে।

অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন সাদ আল আফনান (১৯)। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গত রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে সাদ আল আফনান নিহত হন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সালেহ আহমদের ছেলে। শহরের ঝুমুর এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিনই দাফন হয়েছে তাঁর মামার বাড়িতে।

আফনানের মামা ষাটোর্ধ্ব হারুনুর রশিদ শোক ভুলতে পারছেন না। চোখের পানি মুছে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাগনেকে কেন মরতে হইল। জোয়ান ছেলেডারে এইভাবে কবরে নামাইলাম। জীবনে ভাবতেও পারিনি। বোনটারে বাঁচানোই এখন কষ্ট হয়ে গেছে।’

হারুনুর রশিদ বলেন, দুই মাস আগে তাঁর বোন নাছিমা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীকে হারিয়েছেন। রোববার হারিয়েছেন একমাত্র ছেলেকে। দুই মাস আগে আফনানের বাবা সালেহ আহমদ সৌদি আরবে মারা গেলেও এক মাস আগে তাঁর লাশ দেশে এনে দাফন করা হয়েছে। আফনানকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে মাথায় গুলি করেন এবং পরে পিটিয়ে হত্যা করেন।

গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীতে নেওয়ার পথে বেলা তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। তাঁদের মধ্যে ছয়জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা চারজন। অন্য দুজনের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।

নিহত অন্য তিন শিক্ষার্থী হলেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার ওয়াহেদ বিজয়, শিক্ষার্থী ওসমান গনি, দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. সাব্বির।

এ ছাড়া সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) হারুনুর রশিদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়িচালক যুবলীগের কর্মী মো. রাসেল, যুবলীগ কর্মী মো. শাহজাহান, মো. রিয়াজ,  পৌর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আকিবুল হাসান সিফাত, ছাত্রলীগ কর্মী তাওহীদ কবির রাফি নিহত হয়েছেন।

ওই দিন সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে শত শত আন্দোলনকারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিনের বাসার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় টিপুর বাসায় অবস্থান নেওয়া আওয়ামী নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন।