রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মাদক-অস্ত্র চোরাচালান রোধে সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত

বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা–সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির ৩০তম সভা। গতকাল উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা আশ্রয়শিবিরে
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোতে শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থা, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে।

গতকাল বুধবার বিকেলে উখিয়ার শফিউল্লাহকাটা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৭) বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা–সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির ৩০তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল আলম মিনা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, বিজিবি রামু সেক্টরের পরিচালক কর্নেল মো. মেহেদী হোসাইন কবীর, ৮, ১৪ ও ১৬ এপিবিএন অধিনায়ক, র‌্যাব, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৭) এ ব্লকের আরসিও কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এর আগে আশ্রয়শিবিরে এ কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের পালানোর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, পালানো রোধ করতে আশ্রয়শিবিরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হবে। আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ খুনোখুনি বৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যাম্পের শান্তি–শৃঙ্খলা রক্ষা, সাধারণ রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। আশ্রয়শিবিরে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ, মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) কার্যক্রম বৃদ্ধি ও তাঁদের অপরাধ কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, খুনোখুনিসহ অপরাধ বাড়ছে। মাদক ও অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ক্যাম্পের শান্তি–শৃঙ্খলা কীভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কার্যক্রম চলে আসছে। আগে মিয়ানমার মংডুতে নির্মিত আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এতে রোহিঙ্গাদের আপত্তি ছিল। এখন মিয়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে তাঁদের ফেলে আসা জায়গায় (গ্রামে) পুনর্বাসন করা হবে। এতে রোহিঙ্গারা সন্তুষ্ট। প্রত্যাবাসন কীভাবে কার্যকর করা যায়, বৈঠকে সে ব্যাপারে কথা হয়েছে।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালানো ঠেকাতে নানা সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আগামীকাল শুক্রবার রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর পূর্ণ হলেও এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। ২৫ আগস্টকে আশ্রয়শিবিরসমূহে রোহিঙ্গারা ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। আগামীকালও আশ্রয়শিবিরসমূহে গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে রোহিঙ্গারা।