ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া গতকাল সকালেও অনেক জায়গায় জোয়ারের পানি দেখা গেছে
ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া গতকাল সকালেও অনেক জায়গায় জোয়ারের পানি দেখা গেছে

ভোলায় আজ রাতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আজ মঙ্গলবারও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে ভোলার অধিকাংশ এলাকা। গত রোববার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় বিদ্যুতের সরবরাহব্যবস্থা পুরোপুরি সচল হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) জানায়, আজ রাতের মধ্যে তাদের ৫০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই বিদ্যুৎ-সুবিধা ফেরত পাবেন। অন্যদিকে আরেক প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, সন্ধ্যার মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।
 
বিদ্যুতের অভাবে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। ভোলা সদর উপজেলার গাজীপুর রোডের বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় বাসায় পানি আসছে না। মুঠোফোনেও চার্জ দিতে পারছেন না। ইন্টারনেটের লাইন বন্ধ আছে। ঘরের মধ্যে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে।

ঝড়ে সব এলাকার গাছপালা ভেঙে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে বোরহানউদ্দিন থেকে আসা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। গতকাল রাত থেকে সরবরাহ লাইন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, আজ রাতের মধ্যে ৯০ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সুবিধায় আওতা আনা সম্ভব হবে।
জেলা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী মো. ইউসুফ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোতে ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এ কারণে ভোলার কলকারখানাও বন্ধ আছে।

তবে আজ রাতের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী মো. ইউসুফ। আজ সকালে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ঝড়ে সব এলাকার গাছপালা ভেঙে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এ কারণে বোরহানউদ্দিন থেকে আসা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। গতকাল রাত থেকে সরবরাহ লাইন সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, আজ রাতের মধ্যে ৯০ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সুবিধায় আওতা আনা সম্ভব হবে।

এদিকে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার খালেদ হোসাইন দাবি করেন, জেলায় ৪ লাখ ২৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে দুই লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আজ সন্ধ্যার মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্রাহক আবার বিদ্যুতের সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এ জন্য সাত ঠিকাদারের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন তিন শতাধিক কর্মী।

বিদ্যুতের সমস্যা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভোলা সদরের অনেক এলাকা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। ভোলা পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে সড়কে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান ও সংযোগ সড়কে পানি জমে আছে।

আজ সন্ধ্যার মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্রাহক আবার বিদ্যুতের সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এ জন্য সাত ঠিকাদারের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন তিন শতাধিক কর্মী।
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার খালেদ হোসাইন


সরেজমিনে আজ সকালে দেখা যায়, ভোলা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলিয়া মাদ্রাসা রোড, গরুর হাট সড়ক, খালপাড় সড়ক, কদম আলী সড়কের গর্তে পানি জমে আছে। ভোলা শহরের আশপাশে, শহরতলি বাপ্তা ইউনিয়নের ৮ নম্বর এলাকায় বোরো ধান ডুবে গেছে। রাস্তাঘাটে গাছ, গাছের ভাঙা ডাল পড়ে আছে। বিদ্যুতের তারে ডাল ঝুলে আছে। গত শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে সবকিছু দুমড়েমুচড়ে গেছে।

আলিয়া মাদ্রাসা সড়কের বাসিন্দা জালালউদ্দিন বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে এলাম। এখানেও ঘর ভেসে গেল জোয়ারের পানিতে। কিন্তু ইলিশা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে পানিও ওঠেনি।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভোলায় মোট চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ফারুক হোসেন হাজারি (৫৫) নামের এক ব্যক্তি গাছচাপায় মারা গেছেন। এ ছাড়া দৌলতখান উপজেলার দৌলতখান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে মাইশা (৫) ও বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাচড়া ইউনিয়নে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০) ঘর চাপায় মারা যান।

এর আগে ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে গত রোববার রাতে মনেজা খাতুন নামে এক বৃদ্ধা ঘর চাপা পড়ে নিহত হন।