টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলায় অন্তত ৮৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের অন্তত ৬৮টি গ্রামে গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকে বন্যার পানি ঢুকেছে। গ্রামের রাস্তা, পুকুর, ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয় প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।
উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর এক থেকে আধাফুট পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।
কৈলাটি ইউপির চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন জানান, তাঁর ইউনিয়নের বেনুয়া, খলা, চারালকোনা, সনুড়া, সাকুয়া ইন্দ্রপুরসহ ১৫টি গ্রামে নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিচু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পোগলা ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, তাঁর ইউনিয়নের প্রায় ২৩টি গ্রামে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ কিছুটা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
খারনৈ ইউপির চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক ভূঁইয়া বলেন, তাঁর ইউনিয়নটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। তবে গতকাল সোমবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের চাপে রাজনগর, বালুচড়া, বাউসাম, চৌতানগর, তাড়ানগর, ঘোড়াগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল রেলস্টেশন এলাকায় ১০৪ মিলিমিটার হয়। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়া ঝাঞ্জাইল রেলস্টেশন এলাকায় ১০৪ মিলিমিটার হয়। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলায় ৫০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বারহাট্টার ইউএনও ফারজানা আক্তার জানান, তাঁর উপজেলার রায়পুর, চিরাম ও সাহতা ইউনিয়নের প্রায় ৯টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এটাকে বন্যা বলা যাবে না।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।