কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তিনি ছাড়া চেয়ারম্যান পদে আর কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে কুলিয়ারচরে আগামী ৫ জুন ভোট হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ওই দিন বাছাইয়ে আবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র টিকে গেলে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।
আবুল হোসেন এক যুগ ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একপর্যায়ে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। নতুন করে তাঁর প্রার্থী হওয়া এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কেউ প্রার্থী না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কুলিয়ারচরে নানা আলোচনা হচ্ছে। একই সঙ্গে এ নিয়ে চলছে রাজনৈতিক নানা হিসাব–নিকাশ।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান। জিল্লুর রহমানের বাড়ি ভৈরবে। স্বাধীনতার পর থেকে কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণ ছিল শিল্পপতি মুছা মিয়া ও তাঁর পরিবারের হাতে। মুছা মিয়ার পরিবারের সঙ্গে জিল্লুর রহমানের ছিল আস্থার সম্পর্ক। প্রতিটি নির্বাচনে জিল্লুর রহমান ও তাঁর পরিবারের প্রয়োজনে মুছা মিয়ার পরিবারের ভূমিকা ছিল। এখন জিল্লুর রহমান কিংবা মুছা মিয়া কেউ বেঁচে নেই। তবে এই সম্পর্ক পরবর্তী প্রজন্মও অটুট রেখেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, কুলিয়ারচরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ মুছা মিয়ার পরিবারের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে সেটি হোঁচট খায় ২০১৪ সালের শেষ দিকে। ওই বছর নেতৃত্ব নিয়ে মুছা মিয়ার পরিবারে বিভক্তি দৃশ্যমান হয়। মুছা মিয়ার ছোট ভাই আবুল হোসেন তখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তখন মুছার ছেলে ইমতিয়াজ বিন মুছা রাজনীতিতে দৃশ্যমান হন। নেতৃত্ব নিয়ে চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হলে আবুল হোসেন রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কয়েক দিনের ব্যবধানে ইমতিয়াজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এবং নৌকা প্রতীকে কুলিয়ারচর পৌরসভার মেয়র হন। চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বে পরিবারের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইমতিয়াজ এখন আর মেয়র নেই।
কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শিল্পপতি ইয়াছির মিয়া। দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান হওয়া ইয়াছির উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০২১ সালে ইয়াছির মিয়াকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে ভিন্ন মেরুকরণ তৈরি হয়। তখন কয়েকটি ইস্যু ঘিরে মুছা মিয়ার পরিবারের রাজনীতি চ্যালেঞ্জে পড়ে। একপর্যায়ে ইয়াছির-ইমতিয়াজের বিভাজন দৃশ্যমান হয়।
সূত্র জানায়, এমন পরিস্থিতিতে মুছা পরিবারের হাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাচা-ভাতিজার দূরত্ব কমানোর গুরুত্ব অনুধাবন করে দলের একটি অংশ। দূরত্ব কমাতে সংসদ সদস্য নাজমুল হাসানের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। বিষয়টি স্পষ্ট করতে আবুল হোসেনকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হয়। এতে হাইকমান্ডের সবুজসংকেত থাকায় ইয়াছির মিয়াও এবার প্রার্থী হননি।
দীর্ঘ বিরতির পর রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ভাতিজাও (ইমতিয়াজ) চান, জনপ্রতিনিধি হয়ে রাজনীতিতে থাকি। অনেকের চাওয়ার কারণেই এই পদে আসার ইচ্ছা জাগল।’ ইমতিয়াজ বিন মুছা বলেন, ‘কিছু ভুল–বোঝাবুঝি ছিল, এখন নেই। দলের সবাই চাচাকে চেয়েছে। চাচা প্রার্থী হলে কেউ প্রার্থী হবে না, এমন ঘোষণাও আসে। আমাদের ঐক্যের কারণে অন্যরাও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ হারিয়েছে।’ আবুল হোসেন আবার রাজনীতিতে দৃশ্যমান হওয়ায় দল, জনগণ ও পরিবার উপকৃত হবে বলে তিনি স্বীকার করেন।
মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াছির মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশে ও প্রবাসে ব্যবসা আছে। দিন দিন ব্যবসা বড় হচ্ছে। তাঁর পক্ষে এখন কুলিয়ারচরবাসীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।