ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা সিটি বন্ধন বাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা সিটি বন্ধন বাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়

নারায়ণগঞ্জে বন্ধন পরিবহনের দখল নিতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

নারায়ণগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বন্ধন পরিবহনের দখল নিয়ে আজ রোববার বিকেলে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষের সময় এক ব্যক্তিকে অস্ত্র হাতে নিয়ে দুটি গুলি করতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনকে আটক করেছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহন দখল করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শামীম ওসমানের অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন পরিচালনা করতেন। গত বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধন পরিবহনের পরিচালক ছিলেন বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহ তপন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সিটি বন্ধন পরিবহনের দখল নেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুব উল্লাহর ভাগনে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন রানার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় তাঁরা সিটি বন্ধন পরিবহনের কাউন্টারের লোকজনকে মারধর করেন এবং সেখানে অবস্থান নেন।

এ ঘটনায় দুপুর দেড়টার দিকে জাকির খানের গ্রুপের সমর্থক লিটন ও সালাউদ্দিন সাল্লুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে টার্মিনালটি দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা বন্ধন পরিবহনের কাউন্টারের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় সেখানে জাকির খানের গ্রুপের একজনকে অস্ত্র হাতে দুটি ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এবং সেখান থেকে মাহবুব উল্লাহর অনুসারীরা পালিয়ে যান।

এদিকে বিকেল তিনটার দিকে সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষের অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জাকির খানের গ্রুপকে ধাওয়া দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া–সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

সংঘর্ষের পর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনকে আটক করেছে।

সিটি বন্ধন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০০৯ সালে বন্ধন পরিবহনের গাড়ি ছিল মাহবুব উল্লাহর। পরে তিনি গাড়ি বিক্রি করে চলে যান। আমরা সাধারণ গাড়িমালিক ও শ্রমিকেরা মিলে সিটি বন্ধন নামের পরিবহন পরিচালনা করে আসছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহ তাঁর ভাগনে সাখাওয়াতের নেতৃত্বে আবার সিটি বন্ধন পরিবহন দখলে নেন। তাঁদের হামলায় পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সাতজন আহত হয়েছেন। গাড়ি না থাকলেও চাঁদাবাজি করার জন্য সিটি বন্ধন পরিবহন দখলে নিয়ে বন্ধন নামে তাঁরা চালাতে চান বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাখাওয়াত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এ ছাড়া লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধন ও সিটি বন্ধন পরিবহনের মালিকানা নিয়ে জাকির খান গ্রুপের সমর্থক লিটন-সালাউদ্দিন সাল্লু ও বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহর ভাগনে সাখাওয়াত হোসেনের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ শুরুতে তাদের দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানায়। কিন্তু তাঁরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করেনি বলে জানান তিনি।