কেউ কেউ অনলাইনে স্বচ্ছন্দবোধ করলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনও ঈদের কেনাকাটা বিপণিবিতানে গিয়ে সারতেই পছন্দ করেন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার এলাকায়
কেউ কেউ অনলাইনে স্বচ্ছন্দবোধ করলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনও ঈদের কেনাকাটা বিপণিবিতানে গিয়ে সারতেই পছন্দ করেন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার এলাকায়

ঘরে বসে ঈদের কেনাকাটা, বাড়ছে আগ্রহ

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাদিয়া তাসনিম। ঈদের কেনাকাটার মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের স্মার্টফোনকে। দোকানে ঘুরে ঘুরে পোশাক কেনার থেকে মুঠোফোনের স্ক্রিনে অনলাইন শপগুলো থেকে পোশাক বাছাই করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
শুধু সাদিয়া নন, তাঁর মতো অনেকেই এখন ঈদের কেনাকাটার জন্য বেছে নেন বিভিন্ন অনলাইন শপকে। সাদিয়া বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনাকাটা সাশ্রয়ী। মার্কেটের তুলনায় অনলাইন শপগুলোয় বিভিন্ন ছাড় থাকে। আবার অধিকাংশ শপেই পণ্য আসার পর মূল্য পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। তাই প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কম।
দেশের স্বনামধন্য প্রায় সব ব্র্যান্ডের এখন অনলাইন শপ রয়েছে। গত কয়েক বছরে দেশে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে কেনাকাটার প্রচলন বেড়েছে, বিশেষ করে মহামারির পর থেকে। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান ও সময় সাশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে এখন অনলাইন শপগুলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসব শপে কেনাকাটা করেন ক্রেতারা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়, বিনা মূল্যে পণ্য পরিবহনসহ বিভিন্ন সুবিধা পান ক্রেতারা। এসব পণ্য কেনাকাটায় মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) ও ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমেও টাকা পরিশোধ করার সুবিধা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে ব্যাংকের কার্ডে ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) একই সময়ে লেনদেন হয়েছিল ৭ হাজার ৭২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।
দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটির নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬০০। তবে এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে আরও কয়েক গুণ বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ক্রেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করায় দিন দিন ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ২০১৮ সালে অনলাইন পোশাক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান শুরু করেন তাখরিন খান। বর্তমানে ফেসবুকের পাশাপাশি ‘সুন্দরী’ নামে ওয়েবসাইটও রয়েছে তাঁর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার পর থেকে মানুষ অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকেছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ মানুষ প্রতিদিন পেজ ও ওয়েবসাইট থেকে পণ্য অর্ডার করছে।

সারা বছর অনলাইনে পণ্য বিক্রি করলেও ঈদকে ঘিরে রোজার আগে থেকেই বিভিন্ন অনলাইন শপগুলোয় দেওয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়। শুধু পোশাক নয়; ঈদের সাজ, গয়না, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা রয়েছে। শাড়ি, কুর্তা, সালোয়ার-কামিজ, গয়না, পাঞ্জাবি, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব শপে। এবারে ঈদের বাজারে ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, মেয়েদের পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজ, ভারতীয় কুর্তাসহ বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশের এক স্থানে বসে বিভিন্ন অঞ্চলের পোশাক খুব সহজে পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য যানজট, ভিড় এসব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। পাশাপাশি পণ্যে কোনো সমস্যা হলে, সেটি ফেরতও দিতে পারছেন। অনলাইনে পোশাক বিক্রি প্রতিষ্ঠান রিরিমের স্বত্বাধিকারী ঐশী ঘোষ বলেন, দিন দিন বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা বাড়ছে। পোশাকের ক্ষেত্রে বিদেশি পোশাকের পাশাপাশি দেশীয় কাজের পোশাকের কদর আছে ঈদকে ঘিরে।
জানতে চাইলে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জোনাল কমিটির কো-চেয়ারম্যান জহিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদ ঘিরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা অনলাইন শপগুলোয় বিক্রি বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে কিছুটা কমেছে। ফলে উদ্যোক্তা আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে ই-ক্যাবের সহযোগিতায় উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।