বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি–১ ও বারি–২ নামের দুই জাতের তরমুজ উদ্ভাবন করেছে। বীজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়।
খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা ও বগার বিলের ২০ বিঘায় বিশাল এক মাছের ঘের। ঘেরের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচায় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তরমুজের গায়ে ডোরাকাটা দাগ ও রং কালচে-সবুজ।
অসময়ের এই তরমুজের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। দীর্ঘ গবেষণার পর প্রথমবারের মতো উদ্ভাবিত বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ এই দুই জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করে সাফল্য পেয়েছেন কয়রার কৃষকেরা।
অল্প পরিসরে ঘেরের পানির ওপর মাচা তৈরি করে তরমুজ চাষে সফলতা পাওয়ার পর কয়রা উপজেলার কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষিবিদেরা। এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় উপজেলার উলা বাজার মাঠে অমৌসুমি তরমুজ চাষে কৃষকের করণীয় নিয়ে মাঠ দিবস ও উন্মুক্ত আলোচনা সভা করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ।
খুলনা জেলা কৃষি গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (গবেষণা) সাবিনা ইয়াসমিন।
খুলনা জেলা সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ নিয়ে গবেষণা করে এবারই প্রথম কয়রা উপজেলায় পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য এসেছে। এই দুই জাতের তরমুজের বীজ কৃষকেরাই সংরক্ষণ করতে পারবেন। একটি জাতের তরমুজের ভেতর হলুদ, অন্যটির টকটকে লাল। সারা বছরই চাষ করা যায়। এতে কম পরিশ্রমে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। রোপণের ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি করা যায়।
কয়রার বাগালী ইউনিয়নের উলার বিল ও বগার বিলের দুটি জাতের তরমুজের খেত পরিদর্শন শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (গবেষণা) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেসব উন্নত মানের তরমুজ পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই বিদেশ থেকে আমদানি করা সংকর জাতের বীজ থেকে উৎপাদন করা হয়। ফলে বীজ আমদানি বাবদ প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। কিন্তু বারি উদ্ভাবিত তরমুজের এই জাত দুটি থেকে কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করতে পারবেন।
স্থানীয় কৃষক মোশারফ হোসেন, ফজলুর রহমান, আলাউদ্দিন, হালিমা খাতুনসহ অনেকেই জানান, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ সংগ্রহ করে ২০ বিঘা মৎস্যঘেরের ওপর প্রথমবারের মতো মাচা তৈরি করে বারি ১ ও ২ জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন তাঁরা।
কৃষকেরা বলেন, আমাদের দেখাদেখি এলাকার আরও ১৫ জন কৃষক ইতিমধ্যে মাচা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। তাঁরাও বীজ সংগ্রহ করে তরমুজ চাষ শুরু করবেন।