সাক্ষাতে স্বজনদের কাছে মাফ ও দোয়া চাইলেন মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির স্বজনেরা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ মঙ্গলবার স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তাঁরা স্বজনদের কাছে মাফ ও দোয়া চেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। তবে পরিস্থিতি দেখে যেকোনো সময় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্বজনেরা সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা একটি কালো মাইক্রোবাসে করে কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে দুপুরে তাঁরা আবার মাইক্রোবাসে করে চলে যান। তাঁরা সাংবাদিকদের নজর এড়িয়ে যান।

দুপুর ১২টার দিকে আরেক আসামি জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনেরা সাক্ষাৎ করতে আসেন। বেলা পৌনে একটার দিকে তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করেন। হুইলচেয়ারে বসে এসেছিলেন জাহাঙ্গীরের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবা আজিম উদ্দিনও। ছিলেন বড় ভাই সোহরাব আলী, ছোট ভাই মিজানুর রহমানসহ ৪০-৪৫ জন। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে তাঁদের কারাগারের পেছনের ফটক দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পরিবারের সব সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। বিচার নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। মাঝখানে তারকাঁটা ছিল। ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ছেলে দোয়া চেয়েছে।’

অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ

কারাগারের সামনে উপস্থিত স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার তাঁদের চিঠি দিয়ে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়। ভেতরে ঢোকানোর সময় তাঁদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেওয়া হয়। সর্বশেষ আজ সকালে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

কারাগার সূত্র জানায়, সাধারণত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় যে কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার কথা, তাঁরা কারাগারে এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক আবদুল জলিল ফোন ধরেননি। রাজশাহী সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মো. ফারুককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে আসামিদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়। দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কারাগারে এসে পৌঁছায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, জেল কোড অনুযায়ী এ ধরনের চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হয়। কোনো ব্যত্যয় না ঘটলে চলতি মাসের শেষ দিকে ওই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে। সেই থেকে ধারণা করা হচ্ছে, যেকোনো সময় তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অধ্যাপক এস তাহের খুন হন। ম্যানহোল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আবদুস সালামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য দুই আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন আদালত। আপিলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।