পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা হাতে পুলিশের সামনে মহড়া দেওয়া তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের একজন যুবলীগ কর্মী, আরেকজন ছাত্রলীগ কর্মী এবং অপরজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, তাঁরা সবাই স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের অনুসারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। কুপিয়ে আহত করা হয় মোতালেব হাওলাদারকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০টি ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
সংঘর্ষের সময়কার একটি ছবিতে দেখা যায়, বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুনের সামনেই ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা হাতে মহড়া দিচ্ছেন তিনজন। তাঁদের একজন ছাত্রলীগ কর্মী সজীব দাসের (২৭) হাতে লাঠি। লাল গেঞ্জি পরা যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ শফি হাওলাদারের (৪৮) হাতে ধারালো অস্ত্র ও সাদা পাঞ্জাবি পরা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লার (৪৭) হাতে লাঠি। তিনজনের বাড়িই উপজেলার কালাইয়া গ্রামে। তাঁদের মধ্যে এনামুল হক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ভাতিজা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ শফি হাওলাদারের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পুলিশ ও দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর মো. গালিব নামের ওষুধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে কালাইয়া বাজারে প্রকাশ্যে কোপানো হয়। এ ঘটনায় শফি হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে, যা বিচারাধীন। ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহামুদ হাসানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ ওঠে শফি হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বড় ডালিমা গ্রামের কামাল হোসেন নামের এক যুবকের চোখ উপড়ে ফেলার ঘটনায় এনামুল হকের যাবজ্জীবন সাজা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর উচ্চ আদালতে আপিল করে তিনি জামিনে আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, তিনি মিছিলে অংশ নিলেও কোনো হামলায় অংশগ্রহণ করেননি। তাঁর হাতে কোনো ধারালো অস্ত্রও ছিল না।
শফি হাওলাদার বলেন, ‘আমার জানামতে এমন কাজ করিনি।’
পুলিশের সামনে ধারালো অস্ত্র হাতে মহড়ার বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘এমন দৃশ্য আমার নজরে পড়েনি।’
চিকিৎসক জানিয়েছেন, হামলায় আবদুল মোতালেবের ডান হাতের তৃতীয় আঙুল কেটে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে। তাঁর বুকের ডান পাশে ও ডান হাতের কনুইয়ের ওপরের অংশে জখম রয়েছে। পা ও মাথায় আঘাত লেগেছে। তাঁকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময় তাঁকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) নিয়ে যাওয়া হয়।
আবদুল মোতালেবের ছেলে ও বগা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহামুদ হাসান বলেন, এর আগে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের উপস্থিতিতে তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এবার পুলিশের সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে তাঁর বাবাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। অদূরেই ছিলেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। মহড়ার সময় অস্ত্রসহ শফি হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করলে হয়তো তাঁর বাবার এমন ক্ষতি হতো না।