এ মৌসুমে আলু চাষে বিঘাপ্রতি ৪২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
জয়পুরহাটে এবার আলু আবাদে প্রতি বিঘা জমিতে ১৪-১৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও মজুরি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৪২-৪৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
তবে কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘায় আলু চাষে ১২ হাজার টাকা বেশি পড়ছে। তাঁদের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে এবার ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ৯৬ শতাংশ জমিতে আলু রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জানুয়ারির শেষের দিকে আলুর ফলন পাওয়া যাবে। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদিত হয়।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছিল ২৯ হাজার টাকা। এবার কৃষিসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এক বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৪১ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার কৃষকের এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনে এবার কৃষকদের বাড়তি খরচ পড়বে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর বিএডিসির অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের আলুবীজের কেজি ছিল ৪৮ টাকা। এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮ টাকা। আবার বেসরকারি আলুবীজ এবার আরও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এসিআই এবং ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের প্রতি কেজি আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা, গত বছর দাম ছিল ৫৮-৬০ টাকা। অন্য বেসরকারি কোম্পানির বীজের দামও বিএডিসির আলুবীজের চেয়ে বেশি। ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে ব্র্যাক ও এসিআই কোম্পানির আলুবীজের চাহিদা বেশি। শ্রমিকের মজুরির দামও বেড়েছে। গত বছর শ্রমিকেরা ২ হাজার ৮০০ টাকার চুক্তিতে প্রতি বিঘায় আলু রোপণ করেছিলেন। এবার তাঁরা প্রতি বিঘায় নিচ্ছেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। আবার নিড়ানির সময়ও প্রতি বিঘায় ৫০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ৮০০ টাকার জায়গায় এবার প্রতি বিঘা চাষ খরচ নেওয়া হচ্ছে হাজার টাকা।
আক্কেলপুরের শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, আলুর মৌসুম শুরু হলেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। যদি ফলন ভালো ও ন্যায্যমূল্য না মেলে তাহলে আলু চাষে লোকসান গুনতে হবে।
একই আশঙ্কা কালাই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে আলু রোপণ করার জন্য শ্রমিকেরা ২ হাজার ৮০০ টাকা নিলেও এবার তাঁরা সাড়ে তিন হাজার টাকার নিচে কাজ করছেন না। আবার বীজের দামও বেশি। এত টাকা খরচ করে যদি আলুর দাম না পাওয়া যায় তাহলে লোকসানে পড়তে হবে।’
ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারের সার ও বীজ ডিলার দুলাল মিয়া বলেন, ‘বাজারে সার ও বীজের কোনো অভাব নেই। দাম বেশি হলেও কৃষকেরা চাহিদামতো সরবরাহ পেয়ে খুশি। তবে বীজের কিছুটা দুষ্প্রাপ্যতা আছে। জেলায় বিএডিসির চেয়ে এসিআই এবং ব্র্যাক কোম্পানির আলুবীজের চাহিদা বেশি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৬ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে।