ষাটোর্ধ্ব হোসেন মিয়া। পেশায় দিনমজুর। কখনো মাটি কাটেন আবার কখনো মাঝির বেশে নৌকার হাল ধরেন। তবে নৌকা বেয়েই তিনি জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন। নৌকার হাল ধরে দিনে যা আয় হয়, তাতেই চালান আটজনের পরিবারের খরচ। জীবন সায়াহ্নে এসে নৌকা বেয়েই চলছে হোসেন আলীর বেঁচে থাকার লড়াই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের দৌলতহাটি গ্রামের বাসিন্দা হোসেন মিয়া। তাঁর স্ত্রীর নাম জুমেলা খাতুন। তাঁদের চার মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে শামছুন্নাহার বেগমকে (২৮) নাসিরনগর উপজেলার নূরপুরে। দ্বিতীয় মেয়ে খায়রুন্নেছাকে একই উপজেলার খাগালিয়া গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে স্বপ্না আক্তার এবং চতুর্থ মেয়ে শম্পা আক্তার ভলাকুট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আর বড় ছেলে শাহ আলম মিয়া (২০) এবং ছোট ছেলে নিহা আলম (১৫) ঢাকার মাটিরটুলা এলাকায় আড়াই বছর ধরে ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করে। তবে ছেলেরা সংসারে তেমন একটা খরচ পাঠাতে পারে না। তাই বৃদ্ধ হোসেনকেই সংসারের ঘানি টানতে হয়। যে বয়সে তাঁর সেবা-শুশ্রূষা দরকার। সেই বয়সে তিনি সংসারের হাল ধরতে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন।
সম্প্রতি নাসিরনগর ডাকবাংলো ঘাট থেকে মেদির হাওরে যাওয়ার সময় নৌকায় হোসেন মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। বয়স হওয়ায় চশমা পড়েন তিনি। তবে শারীরিকভাবে তাঁকে বেশ সুস্থ ও সবল মনে হলো। প্রথম আলোকে হোসেন মিয়া বলেন, উপজেলার মেদির হাওরসহ বিভিন্ন বিল ও নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালিয়ে যাত্রী আনা–নেওয়া করেন তিনি। সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নৌকা চালান। প্রতিদিন তেল খরচ বাদ দিয়ে গড়ে তাঁর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা টেকে। এতেই চালিয়ে নেন সংসার।
হোসেন মিয়া বলেন, দুই ছেলে ঢাকার মাটিরটুলায় আড়াই বছর ধরে ব্যাগ তৈরির কারখানায় কাজ করছে। তাদের অবস্থাও ভালো নয়। কয়েক মাস ধরে তাঁর কোনোমতে সংসার চলছে। আগে বিভিন্ন কাজ করেছেন। একসময় সিলেট ও চট্টগ্রামে মাটি কাটার কাজ করেছেন। ঢাকায় নৌকায় ইট বহন করেছেন। নৌকা চালিয়ে কেটেছে ৩০ বছর। সংসারের খরচ চালাতে এখনো নৌকাই চালাচ্ছেন।
১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকাটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদের ওপর ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। বাকি টাকা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে নৌকাটি বানিয়েছেন। বর্তমানে কোনোরকমে দিন যাচ্ছে। বসে থাকলেও তো সংসার চলবে না। তাই ঘরে বসে না থেকে নৌকা নিয়ে বের হন। বেঁচে থাকতে হবে। তাই বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।