মামলার চাপে কোণঠাসা হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জে দলটির অবস্থা নড়বড়ে। আছে কোন্দলও। এক দশক ধরে উন্মুক্ত মাঠে সমাবেশ করতে পারেননি নেতা-কর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একরকম মাঠছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি শীর্ষ নেতারাও আছেন কারাগারে। এমন পরিস্থিতিতে ৭ জানুয়ারি হতে যাওয়া নির্বাচনে বিএনপি কী করবে, তাদের কৌশল কী হবে—এসব নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বিএনপির হবিগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হকের (সেলিম) সঙ্গে।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে?
এনামুল হক: এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন নিয়েই আমরা ভাবছি না। বর্তমানে বিএনপি এবং এ দেশের প্রায় সব মানুষের ভাবনা একটাই, তা হলো জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। হারানো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যার জন্য বিএনপি ও সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল একদফা আন্দোলন করছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠছাড়া, অনেকেই কারাগারে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান এক দফা আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?
এনামুল হক: যেহেতু বিএনপি জনমানুষের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছে, সেহেতু এ দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এ আন্দোলনে আছি। পাশাপাশি জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশনায় চলমান এ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীর ওপর যতই হামলা, মামলা, নিপীড়ন, নির্যাতন আসুক আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাব, ইনশা আল্লাহ।
গত ১০ বছরে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপিকে খোলা মাঠে কোনো সমাবেশ বা রাজপথে মিছিল করতে দেখা যায়নি। এর কারণ কী?
এনামুল হক: রাজপথে মিছিল-সমাবেশ একদমই দেখা যায়নি, কথাটা সর্বাংশে সত্য নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সরকার দ্বিতীয়টি আছে কি না, তা আমার জানা নেই। কারণ, পুলিশের হাত থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ—কেউ রেহাই পায়নি। এ পরিস্থিতিতে আমরা জেলা পর্যায়ে আমাদের মতো করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল পর থেকে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে। কোনো কোনো উপজেলা কমিটি গঠন হলেও অধিকাংশ উপজেলায় কমিটি গঠিত হয়নি। পাশাপাশি ছয়টি পৌর কমিটি গঠনেও সংগঠনটি পিছিয়ে। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে সাংগঠনিক এমন দুর্বল অবস্থা। আপনি কী মনে করেন?
এনামুল হক: হবিগঞ্জ জেলায় বিএনপির সমস্যা হচ্ছে, তৃণমূলের নেতাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকা। জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে যদি এক ব্যক্তিকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া বা দলের চেয়ে ব্যক্তিকে বড় করে প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেখানে গণতন্ত্র থাকে না, যা বিএনপির নীতি আদর্শের পরিপন্থী। এ কারণে তৃণমূলে সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। তারপরও কাজ একবারেই হচ্ছে না, তা–ও না। এখানে ১৫টি সাংগঠনিক ইউনিট (উপজেলা ও পৌরসভা) কমিটির মধ্যে আমরা ১০টি কমিটি গঠন করেছি। এর মধ্যে ৫টিতে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, আসন্ন নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপির নেতা–কর্মীরা নাশকতা করছেন। এ কারণেই তাঁদের নামে মামলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
এনামুল হক: নাশকতার সংজ্ঞা আওয়ামী লীগের কাছে একরকম, আর জনগণের কাছে অন্য রকম। কারণ, জনগণ ইতিমধ্যে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাস কারা করছে। সেগুলোর দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে অন্তত এ দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার আর কোনো সুযোগ নেই।
হবিগঞ্জের চারটি আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের ২৯ নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
এনামুল হক: বিএনপিসহ দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, সেটা পরিষ্কার। আওয়ামী লীগের হাটবাজারে কী হচ্ছে না হচ্ছে; সেটা নিতান্তই ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপার।
বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা হবে?
এনামুল হক: বর্তমানে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য এ সরকারের পতনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ ছাড়া আমাদের ভাবনায় আপাতত অন্য কিছু নাই। এ সরকারের পতনের পর দেশের জনগণই নির্ধারণ করে দেবে কার প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবে!