অবৈধভাবে নদীর বালু তুলে চৌহালী উপজেলা পরিষদের ভূমি উন্নয়ন 

ঠিকাদারের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন ওই ভূমি উন্নয়নের কাজ করছেন।

পাইপের মাধ্যমে বাল্কহেড থেকে বালু নিয়ে উপজেলা পরিষদের ভূমি উন্নয়নকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত রোববার সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীর সাতপাল এলাকায়

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা পরিষদের ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে। উপজেলার সাতপাল এলাকায় যমুনা নদী থেকে খননযন্ত্রের (ড্রেজার মেশিন) মাধ্যমে বালু তুলে বাল্কহেডে নেওয়া হচ্ছে। পরে চৌদ্দরসি যমুনা নদীর ঘাট এলাকায় বাল্কহেড নিয়ে পাইপের মাধ্যমে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কোদালিয়া গ্রামে বালু ফেলা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত উপজেলা পরিষদের ভূমি উন্নয়নের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন ওই ভূমি উন্নয়নের কাজ করছেন। টাকা বাঁচাতে তিনি অন্য স্থান থেকে বালু না কিনে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। এতে নদী ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

এ সম্পর্কে তাজ উদ্দিন বলেন, ‘এই উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। যে কারণে প্রস্তাবিত উপজেলা পরিষদ চত্বরে ভরাটের জন্য জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়ে কাজটি আমরা করছি। তা ছাড়া তো উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে।’

তবে জেলা নদী রক্ষা কমিশন ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নদী থেকে মাটি তুলে সেগুলো দিয়ে কোনো প্রকল্প ভরাটের সুযোগ নেই। অনুমোদিত বালুমহাল ছাড়া নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করা যাবে না।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে চৌহালী উপজেলা পরিষদের প্রস্তাবিত ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। কোদালিয়া গ্রামে ৬ একর জায়গায় ৬২ হাজার ১১১ দশমিক ৪৫ ঘনমিটার ভিটি বালু মাটি (ডেজার্ড সয়েল) দিয়ে উপজেলা চত্বরটির ভরাট করে ভূমি উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৫ টাকা। কাজটি পেয়েছেন ঢাকার মাসতুরা এন্টারপ্রাইজ। তবে স্থানীয়ভাবে চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন কাজটি করছেন। গত ১৩ জুলাই সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মমিন ভূমি উন্নয়নের কাজের উদ্বোধন করেন।

প্রস্তাবিত চৌহালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে

গত রোববার গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে উপজেলার খাসকাউলিয়া ও খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের মধ্যভাগে সাতপাল এলাকায় যমুনা নদী থেকে বালু তুলে বড় বড় বাল্কহেড ভরাট করা হচ্ছে। সেগুলো নেওয়া হচ্ছে চৌদ্দরসি যমুনা নদীর ঘাট এলাকায়। পাইপলাইনের মাধ্যমে শক্তিশালী সেচযন্ত্র ব্যবহার প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কোদালিয়া গ্রামে প্রস্তাবিত চৌহালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে বালু ফেলা হচ্ছে। পাইপলাইনের মধ্য ভাগে উপজেলার কুরকী গ্রামে অতিরিক্ত সেচযন্ত্র বসিয়ে বালু সরবরাহ কাজের শক্তি বাড়ানো হয়েছে।

এই কাজে আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিনিধি হিসেবে দেখভাল করেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এ জন্য আরও বেশি বাল্কহেড আনা হচ্ছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকার মাসতুরা এন্টারপ্রাইজের নামে কাজটি এনে স্থানীয়ভাবে চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাস্তবায়ন করছেন। তবে তিনি কোথা থেকে মাটি এনে ভরাট করছেন, সে বিষয়টি তাঁদের জানার বিষয় নয়।

নদী ভাঙনকবলিত চৌহালী উপজেলার চৌদ্দরসি এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান, খাসপুকুরিয়া এলাকার রায়হান আলী ও আবদুল কালাম বলেন, ‘নেতারাই যদি অবৈধভাবে যমুনা নদীর মাটি অবাধে কেটে সরকারি বরাদ্দের টাকায় পকেট ভরাট করে, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কী করার থাকে? আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।’