সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুটি সংগঠন আট দফা দাবিতে এখন থেকে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী চট্টগ্রাম নগরের হাজারী লেনের ৫ নভেম্বর সংঘটিত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া সংগঠন দুটি হলো বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট। আজ রোববার বিকেলে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাস লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরের অন্য সাধু–সন্তরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে চিন্ময় কৃষ্ণ বলেন, ৫ নভেম্বর হাজারী লেনের ঘটনায় আটক ও নির্যাতনের শিকার নিরীহ সনাতনীদের মুক্তি দিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া হাজারী লেনে ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
চিন্ময় কৃষ্ণ উল্লেখ করেন, ‘আমরা কোনো অপরাধীর পক্ষে নই। হাজারী লেনে সেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কোনো দুষ্কৃতকারী যদি হামলা করে থাকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা হোক।’
এ ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাধু-সন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান চিন্ময় কৃষ্ণ।
দুই সংগঠনের এক হওয়া সম্পর্কে মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, সনাতনীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন–সংগ্রাম করে আসছে। দুটি জোট ঐক্যবদ্ধভাবে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।
লিখিত বক্তব্য আরও বলা হয়, ‘৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা কারণে ভয়ভীতি দেখিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসংখ্য শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। নির্যাতন এখনো অব্যাহত রয়েছে।’
চিন্ময় কৃষ্ণ বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাষ্ট্রের কাছে ৮ দফা যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে। এ নিয়ে সভা–সমাবেশ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লালদীঘির শান্তিপূর্ণ গণজমায়েত প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অশুভ উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত অভিযোগে ৩০ অক্টোবর ১৯ জনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়। সনাতন ধর্মের অনুসারীরা নিজের মাতৃভূমিকে মাতৃতুল্য রূপে শ্রদ্ধা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের অসীম ত্যাগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, হাজারী লেনের ঘটনার পর ১৫ দিন কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছিল। ১৫ দিন পর ২২ নভেম্বর পূর্বঘোষিত রংপুরের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বরিশালের বিভাগীয় সমাবেশ ২৯ নভেম্বর থেকে পিছিয়ে ২০ ডিসেম্বর নেওয়া হয়েছে। খুলনার বিভাগীয় সমাবেশ ৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, অজপানন্দ ব্রহ্মচারী, অক্ষরানন্দ পুরি মহারাজ, বীরেশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, স্বতন্ত্র দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।