জয়পুরহাটে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলায় আহত চার সাংবাদিক। শনিবার হাসপাতালে
জয়পুরহাটে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলায় আহত চার সাংবাদিক। শনিবার হাসপাতালে

জয়পুরহাটে চার সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

জয়পুরহাটে পাঁচবিবির ফিচকাঘাট এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমিতে জোর করে মাটি কাটা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চার সাংবাদিক হামলা ও মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে পাঁচবিবি থানায় দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার–এর জয়পুরহাট প্রতিনিধি মো. জুয়েল শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন। আজ রোববার সকালে ফিচকাঘাট পীরপাল এলাকার বাসিন্দা রায়হান চৌধুরী বাদী হয়ে পাল্টা মামলা করেছেন।

সাংবাদিক মো. জুয়েল শেখের মামলায় ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসানসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর রায়হান চৌধুরীর মামলায় হামলা ও মারধরের শিকার চার সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে তাঁদের বিরুদ্ধ চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুটি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আজ রোববার দুপুরে পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

জয়পুরহাট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির জেলা প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমিতে জোর করে মাটি কাটা হচ্ছিল—এমন খবর পেয়ে গতকাল চার সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া চার সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়েছেন। বর্তমানে আহত ওই চার সাংবাদিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উল্টো হামলা ও মারধরের শিকার চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সাংবাদিকদের মারপিটের ঘটনায় করা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছেন।

হামলা ও মারধরের শিকার সাংবাদিকেরা হলেন মাছরাঙা টেলিভিশনের জেলা সংবাদদাতা আল মামুন (৩৫), দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার-এর জেলা প্রতিনিধি জুয়েল শেখ (৩৮), বাংলার দূত-এর জেলা প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক (৩৫) ও সংবাদ সারা বেলা-এর পাঁচবিবি প্রতিনিধি বাবুল হোসেন (৩৭)।

সাংবাদিক জুয়েল শেখের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পাঁচবিবি উপজেলার ফিচকাঘাট পীরপাল এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমিতে মহিপুর হাজী মহসিন সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান আইন অমান্য করে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি খননের কাজ করছিলেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভুক্তভোগী লোকজনের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে তাঁরা চারজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল ও তাঁর দলবল নিয়ে সেখানে আসেন। মাহমুদুল ও তাঁর সহযোগীরা লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান ও বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় তাঁদের টাকাপয়সাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

রায়হান চৌধুরী তাঁর মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তাঁর নিজস্ব পুকুর খননের জন্য মেসার্স মাহমুদুল ট্রেডার্সকে দায়িত্ব দেন। মেসার্স মাহমুদুল ট্রেডার্সের পক্ষে কামরুল হাসান ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন কাজ করছিলেন। গতকাল শনিবার সাংবাদিক পরিচয়ে চার ব্যক্তি খনন করা পুকুরে গিয়ে খনন কাজে বাধা দেন। তাঁরা মুঠোফোন দিয়ে পুকুর খনন কাজের ভিডিও ধারণ করেন। তাঁরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। ভেকু মেশিনচালক কামরুল হাসান তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা দেন।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী সুর্বণা মাহাতো বলেন, ‘জমি নিয়ে আমাদের সঙ্গে রায়হান চৌধুরীর বিরোধ চলছে। আমরা আদালত থেকে রায় পেয়েছি। সেই জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আমরা বাধা দিয়েছি, তাতে কোনো কাজ হয়নি। এ কারণে সাংবাদিকদের ঘটনাটি জানিয়েছিলাম। সাংবাদিক আসার পর ভেকু মেশিনের মালিক ছাত্রলীগের নেতা তাঁদের মারধর করেছেন।’