বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামসহ তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগে মামলা করেছেন এক নারী। স্বামীকে মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগে ওই নারী আজ বৃহস্পতিবার জেলা মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা করেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেবুন নাহার আয়েশা মামলাটি আমলে নিয়ে ওই নারীর স্বামীকে পাচার করার অভিযোগ তদন্ত এবং তাঁকে উদ্ধারের জন্য আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আলীকদমের বাসিন্দা পরাণ মালা তঞ্চঙ্গ্যা মামলাটি করেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন আলীকদম উপজেলার সাদ্দাম হোসেন এবং মিয়ানমারের বাসিন্দা আবদুল জলিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আবুল কালাম ও সাদ্দাম হোসেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। গত ১৩ আগস্ট পরাণ মালার স্বামী রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে গরু আনার জন্য সীমান্তের ৫৫ ও ৫৬ নম্বর পিলারের সন্নিকটের ধুংচিপাড়ায় নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে আবদুল জলিল নামে মিয়ানমারের এক পাচারকারী গরু নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। আবুল কালাম ও সাদ্দাম হোসেন গরুগুলো নিয়ে রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে আবদুল জলিলের কাছে জিম্মায় রেখে বলেন, টাকা পরিশোধ করে রাজুকে নিয়ে যাবেন। তবে তাঁরা টাকা পরিশোধ না করায় ১৭ আগস্ট থেকে রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে মিয়ানমারে জিম্মি অবস্থায় নির্যাতন শুরু করেন আবদুল জলিল। রাজু তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী পরাণ মালাকে ফোন করে বলা হয়—টাকা পরিশোধ না করলে তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হবে। রাজুকে গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হয়।
এজাহারে বাদী পরাণ মালা অভিযোগ করেন, স্বামীকে পাচারকারীদের কাছে রেখে আসার বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হলে সাদ্দাম হোসেন রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে সীমান্তে পাঠানোর কথা স্বীকার করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামও আশ্বাস দেন রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে ফিরিয়ে আনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযুক্ত আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি সাড়া দেননি।
তবে মামলার আরেক আসামি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় রাজু তঞ্চঙ্গ্যাকে তিনি চেনেন। তবে তাঁকে গরু আনতে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। রাজুর বাবা ও ভাই মিয়ানমারে থাকেন। রাজু হয়তো সেখানে গেছেন। এখন তাঁর ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য কারও প্ররোচনায় নাটক সাজানো হচ্ছে।
মিয়ানমার থেকে গরু আনার সঙ্গে তিনি যুক্ত কি না, জানতে চাইলে সাদ্দাম হোসেন বলেন, শুধু তিনি নন, আলীকদমে ২৬ হাজার মানুষ থাকলে, ২৪ হাজার মানুষই মিয়ানমার থেকে গরু আনেন।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট আবুল কালামের বিরুদ্ধে চোরাই পথে সিগারেট আনার সময় ম্রোদের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।