এক বছর আগের ঘটনা। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকচাপায় মারা যান ত্রিশালের রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তাঁর স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও তাঁদের ১০ বছরের মেয়ে সানজিদা। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা রত্না বেগম সড়কের ওপর জন্ম দেন এক মেয়ের। পরে নবজাতকের নাম রাখা হয় ফাতেমা। আজ ফাতেমার এক বছর পূর্ণ হলো।
ফাতেমার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকার ছোটমণি নিবাসে কেক কাটা হয়েছে। আর ত্রিশালের রায়মনি গ্রামে শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান নিজের ছেলে, পুত্রবধূ আর আর নাতনির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন।
ফাতেমার দাদা মোস্তাফিজুর রহমান আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ছেলে, পুত্রবধূ আর নাতনির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিজের বাড়িতে ছোট করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকার আজিমপুরের ছোটমণি নিবাস থেকে তাঁকে আজ ফোন করা হয়। বলা হয়, বেলা ১১টার দিকে কেক কেটে ফাতেমার প্রথম জন্মদিন পালন করা হয়েছে।
কথা বলার একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমানের গলা ধরে আসে। তিনি বলেন, ‘একদিকে খুব আনন্দের দিন, আরেক দিকে খুব কষ্টের দিন। সব হারানোর এদিনে আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন ফাতেমাকে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি ঢাকার ছোটমণি নিবাসে ফাতেমাকে দেখতে যান। সেখানে ফাতেমা খুব যত্নে বেড়ে উঠছে। নিয়মিত তাকে খাবার খাওয়ানোসহ সব ধরনের যত্নই করা হচ্ছে। ফাতেমার জন্মের ঘটনা দেশের মানুষের মনে সাড়া ফেলেছিল। ছোট ফাতেমার ছবি সংবাদপত্র আর টেলিভিশনে দেখে অনেক মানুষ তাকে দত্তক নেওয়ার কথা বলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক আইন মেনে শিশুটিকে রাজধানীর আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে পাঠান।
২০২২ সালের ১৬ জুলাই সকালে জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রীকে ত্রিশালের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। আলট্রাসনোগ্রাম শেষে বাড়িতে ফেরার সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন তাঁরা। তখন ট্রাকটি চাপা দেয় তাঁদের। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কোর্ট ভবন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দ্রুতগতিতে অতিক্রম করছিল একটি ট্রাক। একই সময় ওই সড়ক পার হচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগম। সঙ্গে ছিল শিশু সানজিদা। মুহূর্তের মধ্যে ট্রাকটি তাঁদের চাপা দিয়ে চলে যায়। তখন নবজাতক মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়।
দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর ঠিক আগমুহূর্তে সড়কে জন্ম নেওয়া ফাতেমার একটি হাত ভেঙে যায়। তাঁকে শুরুতে ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসায় ফাতেমা সুস্থ হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ফাতেমাকে ঢাকার আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসে পৌঁছে দেন।
ময়মনসিংহ সমাজসেবা কার্যালয়ের উপরিচালক আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘ফাতেমার নিয়মিত খোঁজখবর আমরাও রাখি। সে ভালো আছে। আনন্দের সঙ্গেই বেড়ে উঠছে। আজ তার জন্মদিন কেক কেটে পালন করা হয়েছে।’