মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাটবাজারে মিলছে বিরল সুস্বাদু মাছ সাগর পোনা। গতকাল লৌহজং উপজেলার মালির কনকসার বাজারে
মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাটবাজারে মিলছে বিরল সুস্বাদু মাছ সাগর পোনা। গতকাল লৌহজং উপজেলার মালির কনকসার বাজারে

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং

বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পদ্মার মাছ সাগর পোনা

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের মাছের বাজারগুলোতে গেলেই এখন দেখা মিলছে অত্যন্ত সুস্বাদু ও বিরল মাছ হিসেবে পরিচিত সাগর পোনার। প্রবীণ ব্যক্তিরা এ সাগর পোনাকে ‘শুভঙ্ঘরা’ নামেও চেনেন। প্রতিবছর এ সময় জেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকূল থেকে লৌহজংয়ের মাওয়া হয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘির পাড় পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাতেই কেবল এ সাগর পোনা পাওয়া যায়। তাই সাগর পোনাকে জেলার ঐতিহ্যের অংশ বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মাছের নাম সাগর পোনা হলেও এ মাছটি পদ্মা নদীতে বেশি পাওয়া যায়। শুধু বছরের মাঘ ও ফাল্গুন মাসে জেলেদের জালে ধরা পড়ে। তবে ঘন কুয়াশায় সাগর পোনা জেলেদের জালে বেশি ধরা পড়ে বলে জেলেরা জানান। দুই থেকে তিন ধরনের সাগর পোনা হয়ে থাকে। তাই রকমভেদে এর দরদাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আসল জাতের পোনা মৌসুমের শুরুতে দুই হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। একই রকম দেখতে অন্য ধরনের পোনার দাম শুরুর দিকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হয়ে থাকে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, ধূসর রঙের শরীর ও মেরুদণ্ডের দিকে হালকা কালো দাগ ও কালো চোখবিশিষ্ট এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয় এ সাগর পোনা। কখনো কখনো বড়জোর আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ছোট আকারের সাগর পোনাই খেতে সুস্বাদু বলে জানান তাঁরা। কেউ কেউ সাগর পোনাকে সাধারণ বেলে মাছের বাচ্চা, কেউবা আবার বেলে মাছের আরেক জাত চেউয়া বেলের বাচ্চা বলে থাকেন। এ সাগর পোনা মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর অঞ্চলের মানুষেরাই মূলত বেশি খেয়ে থাকেন। ঢাকার মাছ বাজারেও বিক্রি হয়।

গতকাল শুক্রবার লৌহজংয়ের কনকসার বাজার থেকে তিন হাজার টাকায় দুই কেজি সাগর পোনা মাছ কেনেন রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়টায় অপেক্ষায় থাকি, কখন বাজারে সাগর পোনা পাওয়া যাবে। তখন নিজেদের জন্য কিনি। পাশাপাশি নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য কিনে পাঠাই। মাছ এতটাই সুস্বাদু, একবার যাঁরা খান, দ্বিতীয়বার তারা কিনতে বাধ্য হন।’

কনকসার বাজারের জেলে খলিল ঢাপা জানান, বাজারে এ মাছ আসার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়।

উপজেলার কনকসার গ্রামের বাসিন্দা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুদ কনক বলেন, এটি আসলে সাদা চেউ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Apocryptes bato। এটি মাডস্কিপার দলভুক্ত মাছদের একটি সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের নদী, মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া যায়। এটি দৈর্ঘ্যে ১০ ইঞ্চি বা ২৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।