সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণশ্রমিক নয়ন মিয়াকে (২০) চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে নিহত নয়নের বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর আটক পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন কুড়িগ্রামের কচাকাঁটা থানার নারায়ণপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল, সাবান আলী, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘরা গ্রামের রুবেল মিয়া ও বগুড়া শিবগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই পাঁচজনকে আটক করা হয়েছিল। মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে নয়ন মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নয়ন সিলেটের বিশ্বনাথের বাসিন্দা। নয়নকে হাসপাতালে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নির্যাতনের শিকার আরেক শ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়। পরে নির্মাণাধীন ভবন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইয়ুব আলী নামের ওই শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইয়ুব আলী বলেন, ‘নয়ন মারা যাওয়ার আগে পানি চেয়েছিল, কিন্তু নির্যাতনকারীরা তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি।’
ভবনে কাজ করা ফজলুল হক নামের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদারের লোকজন থাকেন। তাঁদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আর মুঠোফোন চুরির অভিযোগ এনে গতকাল সকাল ছয়টার দিকে একটি কক্ষের দরজা বন্ধ করে নির্যাতন করা হয়। শুধু সন্দেহের জেরে নয়ন ও আইয়ুব আলীকে নির্যাতন করা হচ্ছিল। নয়ন গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন কাজ শুরু করেছিলেন। আর তাঁকে এনেছিলেন আইয়ুব আলী।
নয়নের বাবা আবদুল জলিল বলেন, দুই ছেলে, তিন মেয়ের মধ্যে নয়ন দ্বিতীয়। কাজের জন্য বাড়ি থেকে তাঁর ছেলে বের হয়েছিল। গতকাল সকাল থেকে তাঁরা ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে নয়নের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের ভবনটি নির্মাণ করছে এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সিলেট সিটি করপোরেশনের ১২তলা ভবনও নির্মাণ করছিল। ৩ জুন সিটি করপোরেশনের নির্মাণাধীন ভবনের ওপর থেকে লোহার পাইপ নিচে পড়ে সিটি সুপার মার্কেটের ভেতরে থাকা এক সেনাসদস্যের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়।