কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির ২৮৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাহেব আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৩৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার পর একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁর নাম সাদিকুর রহমান (৬৩)। তিনি মামলার ১ নম্বর আসামি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি সদর উপজেলার কবুরহাট মিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল থেকে আটটি অবিস্ফোরিত ককটেল, বেশ কিছু লাঠিসোঁটা, কাচের টুকরা ও ২৪টি মোটরসাইকেল জব্দ দেখানো হয়েছে। এদিকে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি।
মামলার অন্যতম আসামি হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি বশিরুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম উল হাসান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া, জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে ককটেল বোমা হেফাজতে রেখে জীবননাশের চেষ্টার অপরাধে মামলা হয়েছে। মামলায় এক আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে মামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর মতো আচরণ করছে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক। তবে হামলা-মামলা করে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কর্মিসভায় পুলিশের হামলা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনায় তাঁদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। উল্টো পুলিশ সেই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামের সরদারপাড়া এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা একটি কর্মসূচির আয়োজন করেন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকে সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি দেখে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩০ মিনিট চলা সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।