ত্বকী হত্যার ১১৬ মাসে বিচার চেয়ে মোমশিখা প্রজ্বালন

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার চিহ্নিত ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচার শুরুর দাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের মোমশিখা প্রজ্বালন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১৬ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে বক্তারা এ দাবি জানান।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষসহ অনেকে।

কর্মসূচিতে রফিউর রাব্বি বলেন, যেখানে গণতন্ত্র থাকে না, দুর্বৃত্তরা হয় সর্বশক্তিমান, সেখানে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হতে পারে না, সেখানে সুশাসন থাকে না। ত্বকী হত্যার ১০ বছর হতে চলল অথচ এখন পর্যন্ত তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্রটি আদালতে পেশ করা হয়নি। রাষ্ট্রক্ষমতায় জোর করে থাকতে গিয়ে সরকার বিচারব্যবস্থার টুঁটি চেপে রেখেছে। ত্বকীর ঘাতকেরা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় সিন্ডিকেট করে নারায়ণগঞ্জে পরিবহন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, বালু চুরি, তেল চুরিসহ সব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

সব নাগরিককে সমান দৃষ্টিতে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সংবিধান বলছে, রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিক সমান। কিন্তু আজকে ভিন্ন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। আমরা এ বৈষম্যমূলক, গণবিরোধী বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। সংবিধানে উল্লেখিত জনগণের অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন চাই। সাগর-রুনী, তনুসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যার বিচার চাই।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।

দ্রুত ত্বকী হত্যার বিচার সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার বিচার চাই। কারা ত্বকীকে হত্যা করেছে, আপনি তা জানেন। আপনি ত্বকী হত্যার বিচারের নির্দেশ দিন।’

মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বাসদের জেলা সংগঠক এস এস আবদুল কাদির, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি মাইনুদ্দিন মানিক প্রমুখ।