ঝালকাঠির সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের ফ্যান, বৈদ্যুতিক বাল্বসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকেলে তোলা
ঝালকাঠির সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের ফ্যান, বৈদ্যুতিক বাল্বসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকেলে তোলা

ঝালকাঠিতে এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর

ঝালকাঠিতে এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিনে কেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে পরীক্ষার্থীরা। রোববার বেলা একটার পর ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা শেষে এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের ফ্যান, বৈদ্যুতিক বাল্ব, শৌচাগারের দরজা, কমোডসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এতে লক্ষাধিক টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে। মুঠোফোনে ধারণ করা ভাঙচুরের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দোতলার ২০৩ নম্বর কক্ষের চারটি বৈদ্যুতিক ফ্যান, তিনটি টিউবলাইট ও কক্ষ–সংলগ্ন প্রসাধনকক্ষের ছয়টি শৌচাগারের দরজা, প্যান, কমোড ভাঙচুর করা হয়। ওই কক্ষের পাশে ২০৫ নম্বর কক্ষে দুটি ফ্যান ও দুটি টিউবলাইট ভাঙচুর করা হয়েছে। কক্ষ দুটিতে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ৩১ জন, উদ্বোধন বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫ জন ও পৌর আদর্শ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়।

বিদ্যালয়ের কর্মচারী (আয়া) মাকসুদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীরা হইহুল্লোড় করে নেমে যায়। পরে কক্ষ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি, সব ভাঙাচোরা। তখন স্যারেরাও দায়িত্ব শেষ করে চলে যান।’

এদিকে বিকেলে বিদ্যালয়ে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হরচন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র জমা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বের হওয়ার পর কক্ষ পরিদর্শকের বের হওয়ার কথা। কক্ষ পরিদর্শকেরা কী পরীক্ষার্থীদের কক্ষে রেখে উত্তরপত্র নিয়ে বের হয়ে গিয়েছিলেন? তাঁরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে সরকারি সম্পদের এত ক্ষতি হতো না বলে তাঁরা মনে করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী বলে, প্রতিবছরই এমন ঘটনা ঘটছে। সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ছেলেরা সাধারণত সারা বছর তাদের স্কুলে ঢুকতে পারে না। কেবল পরীক্ষার সময় স্কুলে আসতে পারে। প্রতিবছর প্রতিহিংসা থেকে স্কুলের শৌচাগার, বেঞ্চে আজেবাজে কথা লিখে যায়। এবার তাণ্ডব চালাল।
ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তথ্য করতে গেলে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিব মাওলানা এ এস এম মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রসচিব বলবেন।’ কেন্দ্রসচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে আসছি। ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাসুম বিল্লাহ স্যার। ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি।’

শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের ফ্যান, বাল্ব, শৌচাগারের দরজা, কমোডসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। রোববার ঝালকাঠির সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে

অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীরা ঝালকাঠি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রেটিতে ৫৫০ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। কিছু মেয়ে পরীক্ষার্থীও পরীক্ষা দিয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়নি। এরপরও তদন্তে তাঁর বিদ্যালয়ের ছাত্ররা দোষী প্রমাণিত হলে অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। গুরুত্বসহকারে দেখছি।’