পদ্মা সেতু হওয়ার পর মহাসড়কে যানবাহন কমেছে। তবে ঈদযাত্রায় চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ না হলে ভোগান্তি বাড়বে।
আর কয়েক দিন পরই ঈদ উদ্যাপনে গ্রামের বাড়ি যাওয়া শুরু করবেন শহরের মানুষ। এই ঈদযাত্রায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাসড়কটি দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই মহাসড়কে যানবাহন কমলেও ঈদযাত্রায় চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ট্রাফিক পুলিশ, পরিবহনচালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি স্থানে এই মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ও সংস্কারকাজ চলছে। সদর উপজেলা পরিষদের সামনে চার লেনে উন্নীতকরণকাজের কারণে যানবাহন ধীরগতিতে দুই লেনে চলাচল করছে। এদিকে মহাসড়কের ওই স্থানের উত্তর পাশের তিনটি, দক্ষিণ পাশের তিনটিসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংযোগ সড়ক মিলেছে সড়ক উন্নীতকরণ অংশে।
এই সংযোগ সড়কগুলোর যাত্রী ও যানবাহন চলাচলের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনে সেতুর নিচ দিয়ে আন্ডারপাস সড়কের কাজ চলমান। এ কারণে এসব সংযোগ সড়কের যানবাহনগুলো মহাসড়কের এক পাশ থেকে অপর পাশে যেতে মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনগুলোকে দাঁড়াতে হচ্ছে। দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ না করা হলে ঈদযাত্রায় তীব্র যানজটের কারণে মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।
জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সড়ক) আবদুল কাদের জিলানী প্রথম আলোকে বলেন, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে কাজ শেষ করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের সামনে পর্যন্ত চার লেনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটি দুই লেনে মিলিত হয়েছে। এতে ঢাকাগামী ও পাটুরিয়াগামী যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। প্রায়ই সংযোগ সড়কগুলোর যানবাহন মহাসড়ক অতিক্রম করার সময় ঢাকা ও পাটুরিয়াগামী যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ওই এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই স্থানের উত্তর পাশে দুটি লেনের কাজ চলমান। পাথর ও বালু দিয়ে মেকাডামের কাজ চলছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় সেতুর নিচ দিয়ে আন্ডারপাস সড়কের কাজও চলছে।
পাটুরিয়া থেকে ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনের চালক আরিফ হোসেন বলেন, ঈদের আগে আন্ডারপাসের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। ফলে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সংযোগ সড়কগুলোর যানবাহনগুলোকে মহাসড়ক হয়ে গন্তব্যে চলাচল করতে হবে। এতে মহাসড়কে চলাচলরত উভয়মুখী যানবাহনগুলোকে উপজেলা পরিষদের সামনে দাঁড় করিয়ে সংযোগ সড়কের যানবাহনগুলোকে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মহাসড়কের ওই অংশে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) কে এম মেরাজ উদ্দিন বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে মহাসড়কের চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় সেখানে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। ঈদযাত্রা শুরুর আগে কাজ শেষ করা না গেলে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ও আন্ডারপাসের কাজ করছে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি (সাইড ইঞ্জিনিয়ার) মোহাম্মদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঈদের দুই দিন আগে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং যানজট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, এবারও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।