হবিগঞ্জে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে আসামি করা দুই শিশুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ওই মামলার বাদীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ওই বাদীর নাম অমল ভৌমিক। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী। বাকিতে মাছ না দেওয়ায় মারধরের অভিযোগে তিনি গত বছরের ৪ আগস্ট থানায় একটি মামলা করেছিলেন।
আদালতে দেওয়া অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাছ ব্যবসায়ী অমল ভৌমিক বাকিতে মাছ না দেওয়ায় ৪ নারীসহ ১৮ জন তাঁকে মারধর করেন। মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয় আট বছর বয়সী শিশু রফিককে (ছদ্মনাম)। সে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই মামলায় ১২ নম্বর আসামি করা হয় তার ফুফাতো ভাইকে (১১)। সে গ্রামে থাকে না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার শাহবাগ এলাকায় একটি ফুলের দোকানে কাজ করে। তারা গত বছরের ১৮ আগস্ট থেকে জামিন পেলেও মাসে মাসে আদালতে এসে হাজিরা দিতে হতো। শিশুদের ভোগান্তি দেখে শিশুদের বয়স বাড়িয়ে মামলা ও হয়রানির অভিযোগে ১৭ জানুয়ারি আদালতে একটি আবেদন করেন তাদের আইনজীবী ফজলে আলী।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রফিক (ছদ্মনাম)। মারামারির অভিযোগে তার বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে থানায় মামলা করেছেন গ্রামের এক বাসিন্দা। শিশুটির বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামে। একই শিশুর ১১ বছর বয়সী এক ফুফাতো ভাইকেও ২৮ বছর বয়স দেখিয়ে একই মামলায় আসামি করা হয়েছে। ৪ নারীসহ এ মামলার আসামি ১৮ জন। হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন আবেদনের ওপর আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) শুনানির দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি মামলার বাদী ও তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।
আজ আদালতে বাদী অমল ভৌমিক উপস্থিত ছিলেন না। আদালত শুনানি শেষে বয়স বাড়িয়ে দুই শিশুর বিরুদ্ধে মামলা করায় ওই মামলার বাদী অমল ভৌমিকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার আদেশ দেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মুখলেছুর রহমানকে এ মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া অমল ভৌমিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত এবং ওই দুই শিশুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।
আইনজীবী ফজলে আলী আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানি করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও শিশুদের বয়স বাড়িয়ে এ মামলা করা হয়। আদালত নিজে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়ার পর এ আদেশ দেন। তবে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টিও তাঁরা আদালতের নজরে এনেছিলেন।
আদালত প্রাঙ্গণে শিশুটি প্রথম আলোকে বলে, মামলায় আসামি করায় এবং পুলিশ তার বাড়িতে যাওয়ায় সহপাঠীরা এ নিয়ে টিকা–টিপ্পনী করে। যে কারণে সে লজ্জায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতি মাসে সে মামার সঙ্গে আদালতে আসা-যাওয়া করলেও কী কারণে আসে, সেটা সে জানে না। শিশুটির ফুফাতো ভাই বলে, মামলার বিষয়ে সে কিছুই জানে না। তার বাবা জামিনের আগে তাকে ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে এখনো ঢাকায় থাকে। সেখান থেকেই প্রতি মাসে আদালতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
আদালতে শিশুদের সঙ্গে আসা অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানি করতে বাদী শিশুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত আজ দুই শিশুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় তাঁরা বড় ধরনের হয়রানি থেকে মুক্তি পেলেন।