ফরিদপুরে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার ‘চাঁদাবাজি’র প্রতিবাদ করায় সমন্বয়ককে হুমকি

প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরছেন ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জনি বিশ্বাস। শনিবার দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেনের (মিঠু) বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জনি বিশ্বাস (২৬)। চাঁদাবাজির ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁকে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। তবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা।

আজ শনিবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এই পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন হয়। বেলা দুইটায় সংবাদ সম্মেলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদপুরের সমন্বয়ক জনি বিশ্বাস অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। এ সময় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী সাগর আহমেদ, মেহেদী হাসানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জনি বিশ্বাস বলেন, মোজাম্মেল হোসেন গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরের আলীপুরের বাদামতলী সড়কের ভাড়াটিয়া ও পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মামুন অর রশিদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে টাকার অঙ্ক কমিয়ে দেড় লাখ টাকার দাবি করেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে জনি বিশ্বাস প্রতিবাদ জানান। এর জেরে তাঁকে মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা।

জনি বিশ্বাস বলেন, ‘ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির খবর শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমি গতকাল (শুক্রবার) রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের সত্যতা পাই। বিষয়টি নিয়ে মোজাম্মেল ভাইয়ের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চাই, আপনি আলীপুরে যে চাঁদা দাবি করেছেন, তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। আপনি কেন চাঁদা চেয়েছেন? তখন তিনি আমাকে সকালে তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ফোন কেটে দেন। এর আধা ঘণ্টা পরে ফোন দিয়ে আমাকে হুমকি-ধমকি দেন এবং গালাগাল করেন। তিনি আমাকে বলেন, “তোরা সমন্বয়ক আছিস ভালো কথা, কয়মাস সমন্বয়ক থাকবি? দুই মাস, তিন মাস থাকতে পারবি, তারপরে তোরা ফরিদপুরে টিকতে পারবি তো? তখন তোদেরকে আমি দেখে নেব।’”

চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রতিবাদে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে

চাঁদা চাওয়ার বিষয়টির প্রমাণস্বরূপ একটি ভিডিও সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। ভিডিওতে ভুক্তভোগী মামুন অর রশিদ ওই নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। ভিডিওতে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রথমে আমাকে অচেনা নম্বরে কল দিয়ে লিটন নামে এক ব্যক্তি দেখা করতে বলে। এরপর মিঠু (মোজাম্মেল হোসেন) নিজেই ফোন দিয়ে আমার বাসার নিচে নামতে বলে। আমি ওপর থেকে দেখি, অনেক লোক নিয়ে বাসার নিচে জড়ো হয়েছে। তারা কেউ ছাত্র ছিল না, সকলেই রাজনৈতিক দলের।’

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন মোজাম্মেল হোসেন। এ সময় তিনি মামুন অর রশিদ নামের ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হুমকি-ধমকিসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আমার প্রতিপক্ষ ওই সমন্বয়ককে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছেন। এ ছাড়া আমাদের এলাকার একটি পারিবারিক বিষয়ে মামুন অর রশিদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। পরে তা স্থানীয়ভাবে সমাধান হয়েছে। এরপরই আমার প্রতিপক্ষ জোরপূর্বক মামুন অর রশিদের ভিডিও স্টেটমেন্ট নিয়েছে। যেটি উনিই আপনাদের বলবে।’

এ সময় মামুন অর রশিদ ‘নার্ভাস’ আছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দিন এমন ঘটনার সম্মুখীন হইনি। সেদিন আমি নার্ভাস বোধ করে ভিডিওটিতে কথা বলেছিলাম এবং আতঙ্কিত হয়েই ভিডিওতে অনেক কথা বলেছিলাম। টাকা চাওয়ার বিষয়টি আতঙ্কেই বলেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই ভিডিওতে কথা বলার আগে রাতে ওনারা (মোজাম্মেল গং) এমনেই একটা বিষয় কথা বলার জন্য আমার বাসার নিচে এসেছিলেন। সে সময় বিভিন্ন কথাবার্তাও হয়। যাহোক, একটা ভুল– বোঝাবুঝি হয়েছিল। এরপর গতকাল (শুক্রবার) স্থানীয় কাউন্সিলরকে নিয়ে বসে সমাধান হয়েছে।’