থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র

যে কারণে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে চান না রোগীরা

দেশের সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা বান্দরবানের থানচির মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে চান না। চিকিৎসকসহ জনবলসংকটের কারণেই এমন অনীহা। হাসপাতালটিতে উপজেলার মানুষজন চিকিৎসাসেবাও পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (ইউএইচএফপিও) মাত্র দুজন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। ১৮ জন নার্সের পদে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪ জন।

জেলা সদর থেকে ৮১ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা পরিষদের কিছু দূরে সাঙ্গু নদের তীর ঘেঁষে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থান। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, সৌরবিদ্যুতের সুবিধাসহ আধুনিক প্রায় সব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদসহ (টেকনিশিয়ান) ন্যূনতম জনবল না থাকায় সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ কারণে রোগীরাও বাধ্য না হলে হাসপাতালমুখী হতে চান না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেছেন, জনবলসংকট ও দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল সেবাব্যবস্থার কারণে হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। মানুষের মধ্যে এমন ধারণা, হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা মিলবে না, তাই সহজে কেউ যেতেও চায় না। এই ধারণা পরিবর্তন করতে হলে জনবল যা থাকুক না কেন, চিকিৎসক, নার্সসহ সবাইকে সেবামুখী হয়ে সেবার মান বাড়াতে হবে।

খালি পড়েছে আছে হাসপাতালের শয্যা। জমেছে পুরো ধুলার আস্তর। সম্প্রতি থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, শয্যাগুলো রোগীশূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। পুরোনো ৩১ শয্যায় কয়েকজন ভর্তি রোগী রয়েছেন। কিন্তু ২০২১ সালে সম্প্রসারিত ১৯ শয্যার আধুনিক সুবিধাসংবলিত হাসপাতালে চালু হওয়ার পর থেকে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জানিয়েছেন। ৪টি কেবিন ও ওয়ার্ডের ১৫টি শয্যায় ধুলা জমেছে। বিছানা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। ছাদে স্থাপিত বিশাল সৌরবিদ্যুতের প্যানেলও বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ জানালেন, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চাহিদা পূরণের পর আরও ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু চালু করার কিছুক্ষণের মধ্যে বিকল হওয়ার পর আর সচল করা যায়নি।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন জানালেন, হাসপাতালে ভর্তি হলে নার্সদের সার্বক্ষণিক পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ভর্তি হলেও জ্বরের মাত্রা একটু বেশি হলে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। উবামং মারমা নামের একজন জানালেন, রোগ বেশি হলেও তাঁরা সরাসরি বান্দরবান সদরে চলে যান। কারণ, থানচি হাসপাতালে প্রথমত চিকিৎসক নেই, দ্বিতীয়ত নার্সদের ব্যবহার ভালো নয়। রোগীর রাতে সমস্যা হলে জানানোর মতো কাউকে পাওয়া যায় না।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিসংখ্যানবিদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানালেন, ৫০ শয্যার হাসপাতালে অন্তবিভাগে মাসে ১ হাজার ৫০০ রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু হাসপাতালটিতে গড়ে দেড় শ থেকে দুই শ রোগী সেবা নিতে আসেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী পাওয়া যায়। তবে নতুন হওয়া সম্প্রসারিত ১৯ শয্যার জন্য এখনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পুরোনো ৩১ শয্যার হাসপাতালে রোগী হয় না, তাই নতুন ১৯ শয্যা চালুর প্রয়োজনও হয়নি।

হাসপাতালে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল লাগানো হলেও সেটি কাজ করছে না। অকোজো পড়ে আছে ব্যাটারিগুলো। সম্প্রতি থানচি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

থানচি উপজেলা ইউএইচএফপিও মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেছেন, তিনি প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বে আছেন। তিনিসহ মোট দুজন চিকিৎসক আছেন হাসপাতালে। কেবল দুজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতাল চালানো যায় না। কিন্তু রোগীরা যেমন বাধ্য হয়ে ভর্তি হন, তেমনি তাঁরা দুজনে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতাল চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ জন চিকিৎসক, ১৯ জন নার্স ও ৫ জন উপসহকারী চিকিৎসকসহ ১০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৪৫ জনের পদ শূন্য। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন না করলে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।