অনলাইনে আম বিক্রি বাড়ছে, আসছেন নতুন উদ্যোক্তা 

খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে আম চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আগের বছর চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টরে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমের ব্যবসায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন খাগড়াছড়ির তরুণেরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আমসহ মৌসুমি ফল বিক্রিতে ঝোঁক বেড়েছে খাগড়াছড়ির তরুণদের। ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া মেলায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। অনেকে শখের বশে আম বিক্রি শুরু করে এখন হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।

খাগড়াছড়ি সদরের তরুণ নক্ষত্র ত্রিপুরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আম বিক্রি করে আসছেন ২০১৮ সাল থেকে। প্রতিবছর ক্রেতা বাড়ায় চাষিদের কাছ থেকে আগাম বাগান কিনে নিয়ে আম বিক্রি করেন তিনি। নক্ষত্র ত্রিপুরা বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি শখের বশে তিনি আম বিক্রি শুরু করেছিলেন। প্রথমবারই ভালো সাড়া পাওয়ায় প্রতিবছর একইভাবে আম বিক্রি করেন। এরই মধ্যে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু মৌসুমি ফলের ব্যবসায় লাভ হওয়ায় তিনি আর চাকরির সন্ধান করছেন না। নিজেকে বড় একজন উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান।

খাগড়াছড়ির আরেক তরুণ রুনেল চাকমাও একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আম বিক্রি করে আসছেন। চলতি মৌসুমে ৪০০ কেজির মতো আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের পাঠিয়েছেন। রুনেল চাকমা বলেন, এ বছর ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন তিনি। 

নক্ষত্র ত্রিপুরা ও রুনেল চাকমার মতো খাগড়াছড়ির শতাধিক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আম বিক্রি করছেন। তাঁদের কেউ শিক্ষার্থী, কেউ অন্য পেশার সঙ্গে আম বিক্রিতে যুক্ত। অনেকে কেবল আম বিক্রির আয়েই হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী।

আম বিক্রির সঙ্গে যুক্ত তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির আম্রপালি আমের দেশজুড়েই চাহিদা রয়েছে। এই আম সুস্বাদু এবং আঁশ না থাকায় ক্রেতারা পছন্দ করেন। স্থানীয়ভাবে আম সংগ্রহের পর চাহিদামতো ক্রেতাদের পাঠানো হয়।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা শহরের তরুণ রবিন হাসান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক করছেন। তিনি বলেন, তাঁদের বাড়ির আশপাশে থাকা ২৭টি গাছের আম দীর্ঘদিন ধরেই নামমাত্র মূল্যে তাঁর বাবা বিক্রি করে আসছিলেন। এ অবস্থায় প্রথমবারের মতো ২০২০ সালে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে আম বিক্রির চেষ্টা করেন। প্রথমবারেই আমের দ্বিগুণ মূল্য পাওয়া যায়। মাত্র দুদিনেই বিক্রি হয় ১০০ কেজির মতো আম। এর পর থেকে তিনি নিজের এবং প্রতিবেশীদের আম একইভাবে বিক্রি করে আসছেন। ২০২১ সালে আম বিক্রি করে লাভ হওয়া টাকায় পৈতৃক জমিতে আরও ১৮০টি আম্রপালির চারা লাগিয়েছেন। এ বছর ওই গাছগুলোতেও ফলন এসেছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে আম চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আগের বছর ৩ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। গত বছর খাগড়াছড়িতে ৩৭ হাজার ৯০০ টন আম উৎপাদন হয়।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, এ বছর খরায় কিছু আম ঝরে গেছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক স্থানে আমের আকারও ছোট হয়েছে। তবে যেসব বাগানে আম আছে, বাগানমালিকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। ব্যানানা আম বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে।