আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ১৫টি অভিযোগ তুলেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী পাভেলুর রহমান ওরফে শফিক খান। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না পেয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
পাভেলুর রহমান সম্পর্কে শাজাহান খানের চাচাতো ভাই। আজ সোমবার দুপুরে মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তোলেন তিনি। যদিও শাজাহান খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রথম ধাপে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে।আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন শাজাহান খানের ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিবুর রহমান খান। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পাভেলুর রহমান খান (মোটরসাইকেল)। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
পাভেলুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, আসিবুর রহমান খান তাঁর পিতার অবৈধ সম্পদ এবং প্রভাবের জোরে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শাজাহান খান দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকায় এবং সাবেক মন্ত্রী হওয়ার কারণে অবৈধ সম্পদ ও বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। সেই কালোটাকা দিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে টাকার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, সন্ত্রাসী বাহিনী, মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের নিয়ে নির্বাচনী ফলাফল নিজের পক্ষে নিতে চেষ্টা করছেন।
পাভেলুর রহমান খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু সংসদ সদস্য শাজাহান খান প্রকাশ্যে ও গোপনে নির্বাচনী প্রচারণা করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটার, রাজনৈতিক কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কখনো নিজের বাড়িতে ডেকে এনে আবার কখনো নিজে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ছেলের পক্ষে নির্বাচন করার জন্য প্রভাবিত করছেন। কখনো তাঁদের চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন করতে বাধ্য করছেন, যা সুস্পষ্ট নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এসবের হাজারো প্রমাণ রয়েছে।
প্রমাণসহ ১৫টি লিখিত অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি উল্লেখ করে পাভেলুর রহমান আরও বলেন, এমন অবস্থায় আগামী ৮ মে হতে যাওয়া নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এখনই সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবি জানান। এ ছাড়া শাজাহান খানকে এলাকা ত্যাগের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণও করেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে পাভেলুর রহমান খান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদান, নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকার, লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের মারধর, হত্যার হুমকি, নির্বাচনী কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করেছেন প্রতিপক্ষের প্রার্থী।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহান খান তাঁর নিজ বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মাদারীপুরে থাকলেও আমার ছেলের নির্বাচনী কোনো প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি মাদারীপুরের নিজ বাসায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের আলোচনা করি, তবে এটা নির্বাচনী কোনো বিষয় না।’ এরপর তিনি সরকারি গাড়িতে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।’
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, পাভেলুর রহমান খানের অভিযোগগুলো আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম সংসদ সদস্যের এলাকায় অবস্থান। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অনুসন্ধান করছেন। অসংগতিপূর্ণ কিছু হলে শাজাহান খানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর কবির, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।