মাদারীপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে বাড়ি–দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, পুলিশের ফাঁকা গুলি

দুই পক্ষের সংঘর্ষে ভাঙচুর হওয়া একটি গ্যারেজ। আজ মঙ্গলবার সকালে মাদারীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাকদী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুর পৌর শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০টি দোকান ও ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাকদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুই পক্ষের ৮ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাকদী এলাকার বাসিন্দা জামাল মৃধার সঙ্গে শাহাদাৎ হাওলাদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। জামাল মৃধা জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁর দূরসম্পর্কের আত্মীয় শাহাদৎ। তাঁদের দ্বন্দ্ব মূলত গোষ্ঠীগত।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পাকদী বাজারের ১০টি দোকান ও ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় হামলাকারীরা।

ক্যাশবাক্সে সারা দিনের বেচাকেনার যে টাকা ছিল, তা–ও লুট করেছে হামলাকারীরা। গতকাল সোমবার রাতে মাদারীপুর শহরের পাকদী এলাকায়

উভয় পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে সদর থানার কনস্টেবল ইসমাইল হোসেন (৫৭) আহত হন। এ ছাড়া উভয় পক্ষের আহত হয় কমপক্ষে সাতজন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই পক্ষের আবার সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। সংঘর্ষের সময় ইট–পাটকেলের আঘাতে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারী একজনকে আটক করা হয়েছে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এমদাদ ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা কোনো দল করি না। তারপরও গ্যারেজে থাকা আমার একটি প্রাইভেট কার ও বসতঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলার সময় ওদের হাতে দেশীয় অস্ত্র আর মুখে গামছা ছিল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।’

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হেমায়েত ব্যাপারী বলেন, তাঁর দোকান আর বসতঘর একসঙ্গে। হামলাকারীরা দল বেঁধে এসে প্রথমে দোকানে, পরে ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ঘটনার পর থেকে তাঁরা ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

পাকদী এলাকার মুদিদোকানি নাহিদ খলিফা বলেন, তাঁর দোকান থেকে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। ক্যাশবাক্সে সারা দিনের বেচাকেনার যে টাকা ছিল, তা–ও লুট করে নেয় তারা। দোকানের সব মালামাল তছনছ করে, যা পেয়েছে তা নিয়ে গেছে।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুর রহমান বলেন, হঠাৎ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত এলাকায় ঢুকেই হামলা শুরু করে। বাধা দিতে এলে বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে লোকজন ভয়ে সরে পড়ে। এ সময় ওরা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।