৯ গ্রামের ভরসা ছোট নৌকা

ঘাটে একটিমাত্র ছোট্ট নৌকা। চার-পাঁচজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যায় না। জনপ্রতি নেওয়া হয় পাঁচ টাকা।

ছোট্ট নৌকায় পার হন সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ও দামোদরপুর ইউনিয়নের ৯ গ্রামের মানুষ। গতকাল উপজেলার চকশলাইপুর গ্রামে

পশ্চিম পাশে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন। পূর্ব পাশে একই উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন। মাঝখানে প্রবাহিত ঘাঘট নদী। দুই ইউনিয়নের ৯ গ্রামের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছোট্ট একটি নৌকা। সেটিতেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।

জেলা শহর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে চকশলাইপুর গ্রাম। এটি জামালপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত। এ গ্রামেই নদীর ঘাট। এখানেই নৌকা পারাপার হতে হয়। নৌকা ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে দুই ইউনিয়নের মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। ঘাটে একটিমাত্র ছোট্ট নৌকা। চার-পাঁচজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যায় না। জনপ্রতি পাঁচ টাকায় লোক পারাপার করা হয়। মোটরসাইকেল ও রিকশা পারাপারের সুযোগ নেই।

দুই ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গ্রামগুলো হচ্ছে জামালপুর ইউনিয়নের চকশলাইপুর, চকশলাই, শ্রীকলা, গোপালপুর ও পাতিল্যারকুড়া। দামোদরপুর ইউনিয়নের মধ্যভাঙ্গামোড়, লালবাজার, কান্তানগর ও নিয়ামতনগর।

গতকাল রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ঘাঘট নদী। নদীতে এখন কোমরসমান পানি। অনেকে ছোট নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন। এর মধ্যেই অনেকে গরু পারাপার করছেন।

চকশলাইপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬০) নিজের ভাষায় বলেন, ‘নদীর ওপারোত হামারঘরে জমি আচে। কিনতো হামরা নাংগোল, মই ও গরু নিয়া নদী পার হবার পাইনে। শুকনে দিনোত কসটো করি যাওয়ান যায়। নদীত পানি বাড়লে দুই মাইল ঘুরি যাওয়া নাগে।’ 

একই গ্রামের পানের দোকানি আমিরুল মিয়া (৪২) বলেন, ‘একন্যা বিরিজের জন্য হামরা তো পোরশাসনের কাচে যাবার পাইনে। তাই চেরম্যানের পিছনোত ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়া গেচি, কিনতো বিরিজ হয় নাই।’ 

চকশলাই গ্রামের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, এখানে সেতু না থাকায় দুই কিলোমিটার ঘুরে মহিষবান্দি বাজার হয়ে সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর থেকে মালামাল আনতে হচ্ছে। ফলে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। 

চকশলাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরিনা পারভীন বলেন, ইউনিয়ন দুটির সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হয়। অনেক অভিভাবক শিশু শিক্ষার্থীকে নদী পারাপার করে দিয়ে যান।

শ্রীকলা গ্রামের কলেজছাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানি বৃদ্ধি ও কমার সময় নদীতে স্রোত থাকে। তখন পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সেতুর কোনো বিকল্প নেই। একই এলাকার স্কুলছাত্রী ইতি খাতুন জানায়, এই ঘাটে একটিমাত্র নৌকা। সেটি অনেক ছোট। চার-পাঁচজনের বেশি উঠলে দোল খায়। তারপরও বেশি যাত্রী নিয়ে লোক পারাপার করা হচ্ছে। তারা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাওছার হাসান মণ্ডল বলেন, চকশলাইপুর গ্রামে ঘাঘট নদীর ওপর সেতু নির্মাণে উপজেলা পরিষদের সভায় একাধিকবার বলা হয়েছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। একই মন্তব্য করেন দামোদরপুর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম।

সাদুল্যাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহারিয়া খান বলেন, এখানে সেতু নির্মাণ করা জরুরি। এ জন্য এলজিইডিকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।   

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালেয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, চকশলাইপুর গ্রামে ঘাঘট নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।