খেজুরের বাগান করে স্বাবলম্বী সোলাইমান

সোলাইমান খানের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায়। খেজুরের বাগান ও নার্সারি করে তিন বছরেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

গোসাইহাটের ছোট কাচনা গ্রামে নিজের বাগানে সোলাইমান খান

সোলাইমান খানের বয়স ৩০ বছর। সংসারের অভাবের কারণে কিশোর বয়সে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চালানোই কষ্টকর হয়ে যেত। অভাবের কারণে জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণ করতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে ইউটিউবে বিভিন্ন উদ্যোক্তার ভিডিও দেখে সৌদি খেজুরের বাগান ও নার্সারি গড়ে তোলেন। চার বছরে পেয়েছেন সাফল্য। হয়েছেন স্বাবলম্বী।

সোলাইমান খান শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ছোট কাচনা গ্রামের দলিল উদ্দিন খানের ছেলে। বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে খেজুরের বাগান ও নার্সারি গড়ে তুলেছেন তিনি। 

গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষক পরিবারের সন্তান সোলাইমান খান। অভাবের সংসারে পড়ালেখা করতে পারেননি। কাজের সন্ধানে কিশোর বয়সে গ্রাম ছাড়তে হয়। ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক প্রস্তুত কারখানায় এমব্রয়ডারি বিভাগে কাজ করেছেন। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখতেন। তখন খেজুরের বাগান গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৯ সালে গ্রামে ফিরে আসেন।

পরিচিতজনদের মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে খেজুরের বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর নরসিংদী ও গাজীপুরের দুটি খেজুরবাগান পরিদর্শন করে সেখান থেকে ২০টি চারা সংগ্রহ করেন। ওই চারা নিয়ে এসে ২০১৯ সালে খেজুরের বাগান ও নার্সারির ব্যবসা শুরু করেন সোলাইমান। ওই বাগান করতে তাঁর পরিবারের সাড়ে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। সাড়ে তিন বছর ধরে সোলাইমান নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করছেন। চারা বড় করে গাছে ফলন আসার পর ফলনসহ গাছও বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১ হাজার ৬০০ চারা ও গাছ বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর ১২ লাখ টাকা আয় হয়েছে।

সোলায়মানের পাশাপাশি নার্সারিতে যুক্ত হয়েছেন তাঁর ছোট ভাই স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শিক্ষার্থী এনামুল খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যোক্তারা আমাদের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে বাগান করেছেন। এত অল্প সময়ে আমরা খেজুরের নার্সারিতে সফলতা পাব, তা ভাবতে পারিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি নার্সারি পরিচর্যা ও চারা মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছি।’

সোলাইমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার দেওয়া ২ বিঘা জমিতে প্রথমে ২০টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। পরে সৌদি আরব থেকে বীজ এনে নার্সারি গড়ে তুলি। চারা বিক্রি করছি, ফলসহ গাছ বিক্রি করছি। নার্সারিটাও আরেক বিঘা জমিতে সম্প্রাসরণ করেছি। এ নার্সারি আরও বেশি জমিতে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

গোসাইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, সোলাইমান খানের নার্সারি থেকে চারা নিয়ে অনেকে বাগান করেছেন। তাঁরাও ভালো টাকা আয় করছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তাঁদের নার্সারি ও বাগানের খোঁজ রাখে ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকে।