খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান সেং কুটস্নেম উৎসব
খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান সেং কুটস্নেম উৎসব

অবশেষে হচ্ছে খাসিয়াদের বর্ষবরণ উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’

অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া (খাসি) সম্প্রদায়ের ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠান চলতি বছর না হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এ উৎসব অবশেষে হচ্ছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সম্প্রদায়ের লোকজন।

আয়োজক খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি হবে ২৩ নভেম্বর। প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজনের রঙে সাজবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মাঠ।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমি বলেন, খাসিদের আয়ের উৎস পান চাষ ও ব্যবসা। এবার এই ব্যবসায় মন্দা চলছে। আর্থিক সংকটের কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যেমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ফোন পান তাঁরা। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা আজ ঢাকা থেকে চেকটি সংগ্রহ করবেন। সর্বাত্মক সহযোগিতায় করায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় খাসি সম্প্রদায়ের লোকজন।

প্রতিবছর সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়াপুঞ্জির মানুষ এ উৎসবে অংশ নেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনাগোনাও দেখা যায়। অনুষ্ঠানটি হবে না শুনে খারাপ লেগেছিল বলে জানান খাসি জনগোষ্ঠীর সাজু মারছিয়াং। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে আমাদের খাসি জনগোষ্ঠীর সবাই একত্র হই। সবার সঙ্গে সবার দেখা হয়। অনেক আনন্দ হয় দিনভর। এখন শেষমেশ অনুষ্ঠানটি হবে শুনে বেশ ভালো লাগল।’

এ অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে নাচগান পরিবেশনের মাধ্যমে নিজেদের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন খাসিয়ারা; পাশাপাশি তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস জুমচাষ ও জীবন-জীবিকার বিভিন্ন পদ্ধতি নাচের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

সেং কুটস্নেম উৎসবের দিনব্যাপী সবাই মিলে মাছ শিকার ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা করেন। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দ উদ্‌যাপন করা হয়। ওই সময় নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হন সবাই। অনুষ্ঠানস্থলে ঐতিহ্যবাহী মেলা বসে। এতে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেরা বসেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তির–ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এসব অনুষ্ঠানে আমরা সব সময়ই সহযোগিতা করে থাকি। আমরা যখন শুনলাম খাসিদের অনুষ্ঠান হচ্ছে না, তখন আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিই। এখন তারা অনুষ্ঠানটি করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’