নড়াইলে ভাষাশহীদদের স্মরণে একসঙ্গে জ্বলে উঠল এক লাখ মোমবাতি

নড়াইলে ভাষাশহীদদের স্মরণে লাখো মোমবাতি প্রজ্বালন। বুধবার সন্ধ্যা সোয়ায় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে লাখো মোমবাতি প্রজ্বালন করে নড়াইলে ভাষাশহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে নড়াইল শহরের নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠে (কুড়িরডোব মাঠ) প্রায় এক লাখ মোমবাতি একসঙ্গে জ্বলে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

শিখা প্রজ্বালনের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন একুশের গান—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...।’ এরপর একে একে পরিবেশন করা হয় দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীত।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রায় চার একর খেলার মাঠজুড়ে মোমবাতির শিখায় তৈরি করা হয় নানা আলপনা। বঙ্গবন্ধু ও ভাষাশহীদদের প্রতিকৃতি, বর্ণমালা, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, শাপলা ফুল, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এবং গ্রামবাংলার নানা কৃষ্টি ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় মোমবাতির শিখায়। এ সময় কলেজের মাঠে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়।

১৯৯৮ সাল থেকে কুড়িরডোব মাঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গঠন করা হয় ‘একুশের আলো’ নামে পর্ষদ। পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার বলেন, ‘প্রতিটি মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি আগ্রাসনমুক্ত থাকুক, আলোকিত থাকুক, এর প্রতীকী হিসেবে এ কর্মসূচি।’

বঙ্গবন্ধু ও ভাষাশহীদদের প্রতিকৃতি, বর্ণমালা, শহীদ মিনার, গ্রামবাংলার নানা কৃষ্টি তুলে ধরা হয় মোমবাতির শিখায়। এ সময় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি হয়। বুধবার সন্ধ্যায়

একসঙ্গে লাখো মোমবাতি প্রজ্বালনের উদ্বোধন করেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসান, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শাহাব উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামউদ্দিন খান, নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা, গোলাম মোর্তজা স্বপন, একুশের আলো পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক কচি খন্দকার, নাট্যব্যক্তিত্ব মিলন কুমার ভট্টাচার্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. শরফুল আলম লিটু প্রমুখ।

এ আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা মূর্ছনা সংগীত নিকেতনের সভাপতি ও একুশের আলো পর্ষদের কোষাধ্যক্ষ শামীমূল ইসলাম জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে কুড়িরডোব মাঠে মোমবাতি জ্বালিয়ে এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রথম বছর জ্বালানো হয়েছিল ১০ হাজার মোমবাতি। এবার প্রজ্বালন করা হয়েছে প্রায় এক লাখ মোমবাতি। এবারের কর্মসূচি সফল করতে এক মাস ধরে সাংস্কৃতিক কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও শ্রমিকেরা নানাভাবে কাজ করছেন। আজ সারা দিনে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী মোমবাতি সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই মোমবাতির আলো পৃথিবীর সমস্ত ভাষা ও সংস্কৃতিকে আলোকিত করবে।’